শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : বাংলা লোকসংগীতের অন্যতম প্রধান গায়ক আব্বাস উদ্দীন আহমদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর ভারতের কুচবিহার রাজ্যের বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গানকে তিনি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেন। এছাড়া ইসলামী, আধুনিক, স্বদেশী ও উর্দু গানে তিনি সফলতা পেয়েছেন। তিনি দেশ বিভাগোত্তর ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানে খুবই জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন।
তার বাবা জাফর আলী আহমদ ছিলেন আইনজীবী। আব্বাস উদ্দীন অল্প বয়সে নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেন।
পল্লীগীতিতে তার মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। পল্লীগানে তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠ অদ্বিতীয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামী ভাবধারায় রচিত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দীন ছিলেন প্রথম মুসলমান গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি (হিজ মাস্টারস ভয়েস) থেকে গানের রেকর্ড বের করেন। পরে তার দেখাদেখি অনেক হিন্দু গায়ক মুসলমান নাম ধারণ করে গান রেকর্ড করে সফলতা পান।
আব্বাস উদ্দিনের প্রথম রেকর্ডে ছিল- ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ও ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ গান দুটি৷ তার গাওয়া উল্রেখযোগ্য লোকসংগীতের মধ্যে রয়েছে- ও আমার দরদি আগে জানলে, ওকি ও বন্ধু কাজল ভ্রমরারে, মাঝি বাইয়া যাওরে, সোনা বন্ধুরে কোন দোষেতে যাইবা ছাড়িয়া, আমার হাড় কালা করলামরে, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, নদীর কূল নাই কিনার নাইরে, আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি, আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে, থাকতে পারঘাটাতে তুমি পারের নাইয়া প্রভৃতি। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ তার কন্ঠে প্রথম রেকর্ড করা হয়।
তিনি ব্রিটিশ আমলে ভারতের কলকাতা ও পাকিস্তানের ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি পদে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকার পুরানা পল্টনের হীরামন মঞ্জিলে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আব্বাস উদ্দিন পাকিস্তানের হয়ে ফিলিপাইন (১৯৫৫), জার্মানি (১৯৫৬) ও বার্মায় [অধুনা মায়ানমার] সংগীত (১৯৫৭) সম্মেলনে যোগ দেন।
‘আমার শিল্পীজীবনের কথা’ (১৯৬০) আব্বাস উদ্দীন রচিত আত্মজীবনী। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমী পুরষ্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন।
তার বড় ছেলে মোস্তফা কামাল প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ছোট ছেলে মোস্তাফা জামান আব্বাসী ও মেয়ে ফেরদৌসী রহমান দেশের অন্যতম প্রধান কন্ঠশিল্পী।
১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর আব্বাস উদ্দিন আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।
(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/এইচএসএম/অক্টোবর ২৭, ২০১৩)