দি রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজপথের আন্দোলনে সরকারের ‘রোষানলে’ পড়ে মামলার জালে আটকা পড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

পুলিশের হাতে আটক হওয়া একাধিক নেতাকর্মী জানান, মামলায় সহায়তার জন্য বিএনপির কোনো নেতা বা দলীয় আইনজীবীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা কেবল বড় নেতাদের মামলায় সহায়তা দিয়ে তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ও লিগ্যাল এইড সেলের সদস্য ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম দ্য রিপোর্টকে বলেন, দল থেকে সব নেতাকর্মীকেই প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সিনিয়র নেতাসহ যে সব নেতাকর্মী হাইকোর্টে আসেন তাদের আইনজীবীরা সহায়তা করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা যারা জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী থাকেন, তারাই দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মামলার ব্যাপারে ব্যাপক সহায়তা করে থাকেন।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী আটক হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তা দেওয়া হয়। অথচ বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারা অনেক সময় কর্মীদের চিনতেই পারেন না।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ রকম হওয়ার কথা নয় বা উচিতও নয়। কারণ নেতাদের পরিচয় কর্মীদের দিয়ে। তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ টেনে বলেন, আমার এলাকায় এ রকম একটি উদাহরণও কেউ দিতে পারবেন না।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আটক ও মামলার শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের বিনা খরচায় আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার নির্দেশে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাজধানীর নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদল নেতা রাকিবুল হাসান রাশেদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘লাস্ট হরতালে কাজ করার সময় আমাদের নিউমার্কেট থানার দুই সহযোদ্ধা সাজেদ ও জামালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অসীম ভাই, দিপক ভাই, রওশন ভাই ছাড়া কোনো সিনিয়র নেতা কেউ তাদের খবর নেয় নাই। বিপরীতে মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার, শিমুল বিশ্বাস, সরাফত আলী শপু, সফিউল বারী বাবু ও হাবিবুর রশিদ হাবিব ভাইদের কার আগে কে খবর নেবে তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এটাই এখনকার বিএনপির বাস্তবতা।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসের মধ্যে ৫ দফায় ২০ দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে বিরোধী দলের অন্তত ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে। এদের অনেকেই রাজপথের পাশাপাশি ছুটছেন আদালতে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত সাড়ে ৬ হাজারের বেশি বিএনপি ও সহযোগি দলের নেতাকর্মীকে।

এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ব্যারিস্টার অসীম আরও বলেন, সারাদেশে লাখ লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে সরকার মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে, এখনও জড়াচ্ছে।

খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ২৫ মামলা

গত তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৪টি, আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে আছে ছয়টি মামলা। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধেও একটি মামলা রয়েছে।

মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১৪ মামলা

হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা করা হয়েছে। এইসব মামলায় একাধিকবার কারাগারেও গেছেন তিনি।

আরও যে সব নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা

বিএনপি নেতাদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১/১১ পরবর্তী সরকার ও বর্তমান সরকারের আমল মিলিয়ে মোট ৩৯টি মামলা করা হয়েছে। নির্বাহী কমিটিরসহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বর্তমানে কারাগারে আটক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭০ এরও অধিক। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মামলার সংখ্যাও প্রায় শতাধিক।

এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ফজলুর রহমান পটল, আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, রিজভী আহমেদ, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মশিউর রহমান, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক কেএম মোশাররফ হোসেন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তবে সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতই মামলা দেওয়া হোক না না কেন আন্দোলনের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায় করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এইচএসএম/নূরুল/এসবি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩)