কাজী জামশেদ নাজিম ও আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীসহ এর আশপাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহর থেকে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরতেই এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। এ সংক্রান্ত একটি তালিকা করে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে নাশকতাকারীদের গ্রেফতার ও সহিংসতাকারীদের গ্রেফতারে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, রাজধানীতে যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে মধ্যরাতে। ককটেল, জ্বালাও-পোড়াও যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে এই চিরুনি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে গুলশান, বনানী, যাত্রাবাড়ী এলাকায় এ অভিযান শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ ঘটনা প্রতিরোধ ও নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

গ্রেফতার প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের নামের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ রয়েছে কেবল তাদেরই গ্রেফতার করা হবে।

তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা নয়, নাশকতায় সম্পৃক্ততা আছে এমন তথ্য অনুসারেই গ্রেফতার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

অভিযানে কোনো ফলাফল এসেছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এটা বলার সময় এখনো আসেনি। সাফল্য আসলে আমরা মিডিয়ায় ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমে জানাবো।

এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক ইদ্রিস আলী বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহরে ৩টা ২০ মিনিটে দ্য রিপোর্টকে জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। এতে অংশ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।

তিনি আরও জানান, নাশকতাকারীদের অনেক বড় আস্তানা এ এলাকায় রয়েছে। এখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে নাশকতাকারীরা। তাই এখানে অভিযানকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে যেকোনো সময় এর ফলাফল আসতে পারে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এ অভিযান পরিচালনার জন্য যে তালিকা রয়েছে তাতে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের নাম রয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে অবরোধ ও হরতালে রাজনৈতিক সহিংসতায় তারা হুকুমের আসামি। আর এ কারণেই নাশকতা করার নির্দেশদাতা হিসেবে তাদের নাম তালিকায় আছে।

গোয়েন্দা সূত্রের একাধিক সদস্য জানান, এ অভিযান আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। কেননা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা হতে পারে এমন তথ্য অনেক আগে থেকেই গোয়েন্দাদের হাতে আছে। সে তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আজকে থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে সেটা নির্বাচনের পর পর্যন্ত চলবে। এটা দেশব্যাপী খুব শিগগিরই পরিচালনা করা হবে বলেও জানা গেছে।

গ্রেফতার তালিকায় ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, নাশকতা রোধে নতুন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের যেসব নেতাকে গ্রেফতার করার তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের নাম রয়েছে। তবে এর মধ্যে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের নাম বেশি। ইতোমধ্যে তালিকায় গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের অবস্থানের খোঁজ-খবর ও তথ্য সংগ্রহের কাজও শেষ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিএমপির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১ নভেম্বর ২০১২ থেকে ৯ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই এক বছরে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৫১টি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫৪২টি মামলা দায়ের করেছে। এ সব মামলায় এজহারভুক্ত আসামি ৭ হাজার ৩৬ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ৫২ হাজার ৯ জন। তাদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ হাজার ১১৩ জনকে। মামলার এজাহারের তথ্য অনুসারে, পল্টন, রমনা, মতিঝিল ও শাহবাগ থানার অধিকাংশ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানের নেতারা এজাহারভুক্ত আসামি।

এদিকে সম্প্রতি শাহবাগ ও রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক ৩টি হত্যা মামলা করেছে। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয় শিশুপার্কের সামনে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায়। মালিবাগ রেলগেটে বাসে আগুন দেওয়ার সময় এক পথচারী মারা যাওয়ার ঘটনায় রমনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। তারা সবাই কারাবন্দি রয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাংলামটরে ট্রাফিক পুলিশকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন-এএইচএ/এএস/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)