‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘রাখো’!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে পাত্তা দিচ্ছেন না সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী বুধবার গণভবনে তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাখো’। পাশাপাশি এই সময়ে তিনি যে কোনো নাশকতা ঠেকাতে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অরাজকতাসহ বিশৃঙ্খল পরিবেশ এড়াতে তা কঠোর হাতে দমনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এমন অনুভূতি প্রকাশের সময়ে গণভবনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দ্য রিপোর্টকে এ কথা জানান। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের কর্মসূচি ঘোষণার পর রাতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার গণভবনের বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে যান।
জানা গেছে, ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার। কর্মসূচির দিন ২৯ ডিসেম্বর ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা অন্তত ঢাকায় ঘটতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ঢাকা ও আশপাশের সাত জেলার নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে এবং নাশকতা ও অরাজকতা প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হোক তা চায় না সরকার। এ জন্য প্রশাসনিক এবং দলীয়ভাবে এ কর্মসূচি ঠেকানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকায় ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাস টার্মিনাল, রেল ও নৌঘাটে বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যেতে বলা হবে। তাতে সরকারিভাবেই অবরোধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যে কোনো পরিস্থিতিতে যৌথবাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজনে গণগ্রেফতার অভিযানও চালানো হতে পারে। রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে বিশেষ নজর রাখবে পুলিশ। প্রয়োজনে আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষকে ঢাকার বাইরের লোকদের হোটেলে না রাখা এবং কৌশলে দুই-তিন দিন আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলো এক রকম বন্ধ রাখার চেষ্টা হতে পারে।
সূত্র জানায়, বাইরে থেকে লোক জমায়েত করে ঢাকায় এনে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করা হলে সর্বোচ্চ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী জানান, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়া। স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা, কর্মসূচির আগের দুদিন সড়কপথে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করা। অথবা একই দিন পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়ে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিএনপির ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচি সম্পর্কে বুধবার বলেন, এতদিন অবরোধের নামে তারা মানুষ হত্যা করেছে, সহিংসতা করেছে। এখন তাদের এ নতুন কর্মসূচি সহিংস না অহিংস হবে, তা বলেননি খালেদা জিয়া। সরকার এ কর্মসূচিতে বাধা দেবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি কোন দিকে যায়, তা দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনগণের সঙ্গে ওই দিন আমরাও থাকব। সেদিন মাঠে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গ-সংগঠন মাঠে থাকবে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আপনি সমাবেশ করতে পারেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে শান্তি ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল ও সরকারের দুজন মন্ত্রী দ্য রিপোর্টকে জানান, সরকারিভাবে বিএনপির এ কর্মসূচি নিয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচির অন্তর্নিহিত কারণ উদ্ঘাটন করতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ইতোমধ্যেই কাজে লাগানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিরোধী দল কী ফায়দা হাসিল করতে চায় বা এর অর্থ কী? শুধুই ঢাকায় জমায়েত কিনা, না এর ভেতরে অন্য ষড়যন্ত্র রয়েছে; এসব তথ্য খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরই প্রতিরোধমূলক কৌশল গ্রহণ করবে সরকার।
এদিকে এ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে কয়েকটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের ঢুকে পড়ার আশঙ্কার বিষয়ে সরকার চিন্তিত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ওনার (খালেদা) মার্চ ফর ডেমোক্রেসি আন্দোলনের নামে দলের নেতারা ‘মার্চ ফর ডেস্ট্রাকশন’ করবে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পরিস্থিতিতে কঠোর হবে।
(দ্য রিপোর্ট/টিইএম/এএস/শাহ/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)