প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার
ঢাকা কোর্ট এলাকায় বসছে পুঁজিবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল
নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোর্ট : পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে শিগগিরই বসতে যাচ্ছে প্রস্তাবিত বিশেষ ট্রাইবুন্যাল। আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা কোর্টের ভেতরে বা আশপাশের কোনো এলাকায় ট্রাইব্যুনালের কার্যালয় স্থাপন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসেই (ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির (গেজেট প্রকাশ) প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। পরবর্তীতে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজের পদমর্যাদার একজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে।
ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে আলোচনা করতে গত ২৩ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় বিএসইসির আইন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমিশনার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল গঠনের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে চলতি মাসে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি বিএসইসিকে অবহিত করেন মো. নাসির উদ্দিন।
প্রজ্ঞাপনে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা উল্লেখ থাকবে। বিচারিক কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোন আইন প্রয়োগ করা হবে, তা উল্লেখ থাকবে। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল গঠন সম্পর্কিত বিষয়সহ অন্য কর্মকাণ্ড কিভাবে পরিচালনা করা হবে তাও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর সচিব কমিটির সভায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ক্ষেত্রে একজন বিচারকসহ মোট ৬ সদস্যের জনবল কাঠামোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ২০১২-এর ২৫(বি) ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে একজন দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজের বেতন স্কেল ৩৬ হাজার থেকে ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিএসইসির একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ বিষয়ে সব সময় অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রথমাবস্থায় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। এ ট্রাইব্যুনাল ঢাকা কোর্টের ভেতরে বসানো সম্ভব না হলে আশপাশের কোনো এলাকায় বসানো হতে পারে।’
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এডিবির ঋণ সহায়তাপুষ্ট ‘ইনহ্যানসিং ইফিসিয়েন্সি অব দ্য ক্যাপিটাল মার্কেট’ প্রকল্পের পরামর্শক মিখেল ফারনেল এবং তাদের স্থানীয় পরমর্শক ব্যারিস্টার আফজালের পরামর্শেই বিদ্যমান আইনেই ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। পরামর্শকদের মতে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আপাতত কোনও বাধা নেই। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ২৪ ধারায় শাস্তি ও ২৫ ধারায় অপরাধ আমলে নেয়ার বিধান রয়েছে। ওই অধ্যাদেশের সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ২৫(বি) ধারা সংযোজন করে এক বা একাধিক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, যা গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারসংক্রান্ত দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে কমিশন। শিগগিরই ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে সরকার পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এইচকে/শাহ/ডিসেম্বর ২৬ ,২০১৩)