টাইম ইউজ সার্ভের প্রতিবেদন
পুরুষের চেয়ে ৫ গুণ বেশি কাজ করে নারী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : টাকা ছাড়া বাংলাদেশের পুরুষের চেয়ে নারীরা ৫ গুণ বেশি কাজ করে। অথচ বিনোদন ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে কম সময় ব্যয় করে নারীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) টাইম ইউজ সার্ভের প্রাথমিক ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রথমবারের মতো মানুষের সময় ব্যবহারের এ চিত্র প্রকাশ করা হলো। এই জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিক প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয় সেমিনারের।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ ও অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল। বক্তব্য রাখেন বিবিএসের ইন্ড্রাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইংয়ের পরিচালক শামসুল আলম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন একই উইংয়ের উপ-পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন কর্মে নিয়োজিত নয় এমন পুরুষরা খানার (পরিবারের) কাজে খানার সদস্যদের সেবা প্রদান ও খানার নিজস্ব ভোগের গৃহস্থালীর কাজে ১ দশমিক ২ ঘন্টা ব্যয় করলেও একজন নারী সেখানে প্রায় ৫ গুণ বেশি কাজ করে। এক্ষেত্রে ৬ দশমিক ২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে নারী। অন্যদিকে কর্মে নিয়োজিত নয় পুরুষরা যেখানে অবসর ও বিনোদনে ২ দশমিক ২ ঘণ্টা ব্যয় করে, সেখানে নারীরা মাত্র ১ দশমিক ৩ ঘণ্টা অবসর ও বিনোদনে সুবিধা পেয়ে থাকে।
এছাড়া কর্মে নিয়োজিত পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে কাজে ৬ দশমিক ৯ ঘণ্টা ও নারীরা ৫ দশমিক ২ ঘণ্টা ব্যয় করে।
কর্মজীবী নারীরা গৃহস্থালীর কাজে পুরুষের চেয়ে ৩ গুণ বেশি সময় ব্যয় করে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ১ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও নারীরা ৩ দশমিক ৬ ঘণ্টা কাজ করে। কর্মজীবী পুরুষেরা ১ দশমিক ১ ঘণ্টা অবসর খেলাধুলা ও বিনোদনে ব্যয় করলেও একই কাজে নারীরা শূন্য দশমিক ৮ ঘণ্টা ব্যয় করে।
ব্যক্তিগত পরিচর্যার ক্ষেত্রেও কর্মে নিয়োজিত নয় এমন নারীরা পুরুষের চেয়ে কম সময় পায়। এখানে পুরুষের সময় ব্যয়ের পরিমাণ ২০ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও পক্ষান্তরে নারীর সময় ব্যয়ের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৫ ঘণ্টা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ জরিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জরিপের ফলাফল থেকে পুরুষ ও নারী ভেদে এবং শহর ও পল্লী এলাকার ১৫ বছর ও তদুর্ধ বয়সের নাগরিকদের সময়ের ব্যবহার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, যা কর্মসংস্থান ও নারী উন্নয়ন নীতি এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিবিএস আরো বৃহত্তর পরিসরে এ জরিপ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ম. হামিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নতুন নতুন ক্ষেত্রে জরিপ ও শুমারি করছে এবং সময়ের ব্যবহার সম্পর্কিত পাইলট জরিপ তার মধ্যে অন্যতম। এ জরিপ হতে প্রাপ্ত ফলাফল দেশের জনগণের সময়ের ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে এবং দেশের নারী সমাজ তাদের সময় কোন কোন কাজে ব্যবহার করেছেন এবং পারিবারিক কাজ ও সেবাক্ষেত্রে কী ধরনের অবদান রাখছেন, তা জানা যাবে।
ফারাহ কবির বলেন, অ্যাকশন এইড নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। সময়ের ব্যবহার সম্পর্কিত জরিপের ফলাফল নারীর উন্নয়ন ও তাদের অবদানের সপক্ষে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, যেহেতু প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এ জরিপ করা হয়েছে সেহেতু আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিন্যাস ব্যবহার করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত পরিসরে এ জরিপ করা সম্ভব হবে। তিনি জরিপের ফলাফল কর্মসংস্থান ও সমাজে নারীদের সঠিক অবস্থান নিরূপণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে এ সার্ভের মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে দেশের ৬৪ জেলায় ৩৭৫টি প্রাইমারি স্যাম্পল ইউনিটে (এলাকায়) এ সার্ভের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিটি প্রাইমারি স্যাম্পল ইউনিটে (এলাকায়) ১০টি করে খানা (হাউজ হোল্ড) নির্বাচিত করে ওই সব খানার ১৫ বছরের ওপরে সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইংয়ের পরিচালক শামসুল আলম জানান, মূলত একজন মানুষের কাছ থেকে দুই দিনের (৪৮ ঘণ্টার) তথ্য নেওয়া হয়। ওই দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সে ব্যক্তি যা যা কাজ করবে তার একটি চিত্র নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তিনিটি ফরম ছিল। এর একটি ফরমে তথ্য সংগ্রহকারী সেশন-১ এ নমুনা এলাকার পরিচিতির মধ্যে নয়টি তথ্য এবং সাক্ষাতের বিবরণ সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সেকশন-২ খানা বা বাসস্থানের বিবরণ, গৃহের মালিকানা খানায় প্রধান গৃহের প্রকার, আলোর উৎস, খাবার পানির প্রধান উৎস, রান্নার জ্বালানি, খানার নিজস্ব সম্পদ, খানাটি কী কী পারিবারিক কাজে জড়িত এবং খানার আয়-রোজগারের প্রধান কর্মকাণ্ড- এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া সেকশন-৩ এ খানার বৈশিষ্ট্য অংশে খানার সদস্যদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য, সম্পর্ক কোড ও শিক্ষা কোড পূরণ করা হয়। সেকশন-৪ এ ১৫ বছর ও তার ওপরের মানুষদের বর্তমান কর্মতৎপরতার বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়।
পরবর্তীকালে সময় ব্যবহারের বিষয়ে খানার নির্ধারিত মানুষদের টাইম ডায়েরি নামের দুটি করে ফরম দেওয়া হয়েছিল। এর একটি প্রথম দিন ও অপরটি দ্বিতীয় দিন পূরণ করতে হয়েছিল। পরের দিন তথ্য সংগ্রহকারী ওই সব ফরম সংগ্রহ করেন। কেউ লিখতে না পারলে তার ফরম তথ্য সংগ্রহকারী নিজেই পূরণ করে দিয়েছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এইচএসএম/ডিসেম্বর/শাহ/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)