দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বনে পাওয়া গেছে এক প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। ধারণা করা হচ্ছে এটি ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপা’র সমাধিকে ঘিরে নির্মিত। এ ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে শত শত বছর ধরে আড়ালে থাকা রহস্যের দ্বার উন্মোচন হবে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

সম্রাট আতাহুয়ালপার ছিলেন ইনকাদের শেষ সম্রাট। স্বর্ণের লোভে তাকে স্প্যানিশ উপনিবেশকারীরা হত্যা করে। নতুন এই আবিষ্কারকে মিশরের ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি, রোজেটা স্টোন কিংবা চীনের টেরাকোটা আর্মির মতো আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

স্বর্ণের ব্যবহার ও মজুদের জন্য প্রাচীনকাল থেকে ইনকা সভ্যতা উপনিবেশকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো। সম্রাট আতাহুয়ালপা’র শাসনকালে স্প্যানিশরা ইনকাদের দেশ দখল করে নেয়। স্থানীয় অধিবাসীরা স্বীকার হয় নির্মম অত্যাচারের। নতুন এই আবিষ্কার হয়তো সেসব কথাও বলবে।

স্থাপনাটি ইকুয়েডরের বানোস ডি আগুয়া সান্তা শহর থেকে ২০ মাইল দূরে আন্দিজ পর্বতমালার ল্যাংগানেটস ন্যাশনাল পার্কের কাছে অবস্থিত। ধারণা করা হচ্ছে স্থাপনাটি ১৫৫৩ সালে নির্মিত। স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় সমান ভারসাম্য রাখা হয়েছে। সবদিক থেকে এটি ২৬০ ফুট, ব্যবহার করা হয়েছে ২ টন ওজনের শত শত পাথর।

ইতোমধ্যেই ওই স্থানে ৩০টির মতো শিল্পনিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। যারা এই খননকাজের সাথে সম্পৃক্ত তাদের অধিকাংশের ধারণা এটা সম্রাট আতাহুয়ালপা’র অন্তিম শয়ানের স্থান। সাধারণত এ ধরনের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে থাকে ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার।

হাতে বানানো স্থাপনাটি বেশ বড় জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। খুব সম্ভবত স্থাপনাটি ইনকাদের কোনো নগর চত্ত্বরে অবস্থিত। এর দেয়াল ৬০ ডিগ্রি কোণে বেঁকে উপরে উঠেছে আর ছাদের অংশটি ছিল সমতল। খুব সম্ভবত এটা ব্যবহার করা হতো শিরশ্ছেদের জন্য, যেখানে মানুষের মাথা কেটে ফেলা হলে সেটা এই স্থাপনার ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যেত।

এর আগে গবেষকরা হন্য হয়ে খুঁজছিলেন সম্রাট আতাহুয়ালপা’র সমাধি। নতুন এই আবিষ্কারে ফ্রেঞ্চ-আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদের কণ্ঠে তাই ঝরে পড়ছে উত্তেজনা, ‘হয়তো এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার।’

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইকুয়েডর ও ইংল্যান্ডের প্রত্নতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত এ দলের বিশ্বাস, সম্ভবত ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সালে এ সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল। যদিও ইনকাদের এ সময়কালের ইতিহাস এখনো আঁধারে ঢাকা। জায়গাটি এখনো অনেক দুর্গম ও ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বিপদজনক। ইকুয়েডরের সরকার খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)