নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ-এর সমন্বয়ে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ নামে নতুন এক রাজনৈতিক ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি বা দল যদি এই ফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হতে চায় তাহলে তাদের জন্যও দরজা খোলা আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সরকার যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে এভাবে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না। যুগ যুগ ধরে রাজনীতির এই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে সাড়া পৃথিবী বিভিন্ন ভাষায় প্রতিবাদ করছে। দেশে বর্তমানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সকলে একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই না করলে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে।
১৮ দলীয় জোটের ২৯ তারিখের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চেয়ে কোনো স্লোগান উঠলে এই কর্মসূচিতে এনডিএফ’র কোনো সমর্থন থাকবে না বলেও জানান বক্তারা।
জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, সরকার ক্ষমতার জন্য দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
‘গোলকিপার না থাকলে তো গোল হবেই’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি বলেছেন । কিন্তু গোলকিপার না রাখার সমস্ত ব্যবস্থা তো তিনি নিজেই করে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভুল ব্যাখ্যা করছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন আর তার বিরুদ্ধে কাজ করেন। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
রব বলেন, আজ ঢাকায় এক সরকার এবং ঢাকার বাইরে আরেক সরকার বিরাজ করছে। সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে পুরুষ মানুষ আতঙ্কে গ্রামছাড়া হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীর মতো গুলি করতে করতে পুলিশ গ্রামে ঢুকছে। যারা গুলি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এতে যদি যৌথবাহিনী গুলি করে তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা বিচারের বাইরে একজন মানুষকেও হত্যা করা যাবে না। তিনি অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের তফসিল ও নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, জ্বলন্ত দেশকে জ্বালার হাত থেকে রক্ষার জন্য বৃহৎ দুটি জোট থেকে সমদূরত্বের ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-আকাঙ্খার ভিত্তিতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের মুক্তির সংগ্রাম করতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের জন্য যদি আর একটি পয়সাও খরচ করা হয় তাহলে তার হিসাব দিতে হবে। তিনি দেশের সাধারণ মানুষ, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সকলকে এই ভোটের জন্য সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি ২৯ ডিসেম্বরের ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, এই কর্মসূচিকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি তবে সম্পৃক্ত হচ্ছি না। এই কর্মসূচি যতক্ষণ অহিংস থাকবে ততক্ষণ আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচি সহিংস হলেই আমাদের সমর্থন উঠে যাবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’র নীতি ও কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে দেশে সুস্থ্ ও সৃজনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ এবং এক ব্যক্তিকেন্দ্রীক নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতিতে অর্থবহ ও গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা; নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ না করা; সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, ক্ষমতার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সংবিধানের আমূল সংস্কার নিশ্চিত করা; পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধান করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রতি ৫ বছর পর পর সৃষ্ট সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করা; একনাগারে দুইবারের বেশি কেউই প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না; কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না-এই মর্মে বিধান করা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা; স্বাধীন-শক্তিশালী-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও বর্তমান সংশোধিত আরপিও পরিবর্তন করা; একতরফা নির্বাচন বাতিল ও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/রাসেল/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩)