ডারবান সমীকরণ ভারতের পক্ষে
আরিফ সোহেল, স্পোর্টস এডিটর : ডারবানের ইতিহাস ভারতের পক্ষ নিচ্ছে। ভারত এই মাঠে ৩টি টেস্ট খেলেছে, এক জয়ের বিপরীতে হারের সঙ্গে ড্রও রয়েছে। তবে গত ৫ বছরে ডারবানে ৫ টেস্টের ৪টি হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৮ সালে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর আর জিততে পারেনি। তাদের হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও শ্রীলঙ্কা, যা ভারতের জন্য অনুকূল মানছেন অনেকেই।
২০১০ সালে ধোনির ভারতও ৩ পেসার-এক স্পিনার নিয়ে খেলেছিলেন। ভারতের পক্ষে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন স্পিনার হরভজন সিং। তার সঙ্গে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন সিমার জহির খান। ২ জনই নিয়েছেন ৬টি করে উইকেট। এবারও দৃশ্যপট প্রায় অভিন্ন। রয়েছে ৩ পেসারের সঙ্গে এক স্পিনার।
ইতিহাস আদরে ছায়া দিচ্ছে ভারতকে। কারণ শুধু ভারতই নয়, শেষ ৪ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে। বৃহস্পতিবারও টস জেতা ভারত ব্যাটিং নিয়েছে। অর্থাৎ এবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে হচ্ছে, সেখানই ভারত জয়ের প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছে। সঙ্গে বেশি বেশি প্রাণিত হচ্ছেন ধোনিরা প্রথম টেস্টের জয়-পরাজয়ের নানা সমীকরণে নিশ্চিত হারকে ড্র বানিয়ে।
বিশ্বের এক বনাম ২ নাম্বার টিমের লড়াই, তা-ও ওয়ান্ডারার্সের স্নায়ুউত্তেজক ওই রকম একটা টেস্টের পরে। কিন্তু ডারবানের আবহে করুণ সুর, বাজছে ক্যালিসকে হারানোর বিউগল। ফলে ক্রিসমাসের আবহে আরও একটা উত্তেজক টেস্ট ম্যাচের জন্য তৈরি থাকা মঞ্চে যতটা রোমাঞ্চ মজুত থাকার কথা ছিল, তা নেই। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাভক্তরা যেনো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্যালিসকে বিদায় জানাতে ব্যাকুল-বিহবল। ফলে ক্যালিসের বিদায়ী টেস্টের ঢোল-বাদ্যি ছায়ায় পড়ছে ডারবান।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস বুধবার বিদায়ী ম্যাচের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর পরই ভেসে আসছে একের পর এক বার্তা। ক্রিসমাসের উৎসব পাশে ঢেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা জানাতে শুরু করেছেন শ্রদ্ধার্ঘ্। দীর্ঘদিনের টিমমেট ক্যালিসকে গ্রেটেস্টও কেউ কেউ অবলীলায় বলে ফেলেছেন। মার্ক বাউচার, গ্রায়েম স্মিথ জানাচ্ছেন, আবেগ গ্রাস করছে তাদের ড্রেসিংরুমকে।
তারপরও জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ সামনে টানটান। যেখানে ক্যালিসের অবসর অনেক পিছনের সারিতে, আগে শুধুই টেস্ট জয়ের অঙ্ক। প্রতিদ্বন্দ্বী ২ দেশও আলাদা, কেউ এখানে এলেবেলে নয়। তার কারণ ক্রিকেট-জনতার স্মৃতিতে ভীষণ টাটকা ওয়ান্ডারার্সের স্মরণীয় ম্যাচটি। ভারতের কাছে অঙ্কটা খুব পরিষ্কার৷ জয় এবং শুধুই জয়। টস জিতে ইতিহাসে ভর করেই ব্যাটিং বেছে নিয়েছে ভারত। ডারবানের রেকর্ড বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে ডুবেছে হোম টিম। কাজেই টস জিতেই চোখ বুজে ব্যাটিং নিয়েছে ভারত। আগের জয়ের কথা মনে রেখেছেন অধিনায়ক ধোনি। আবার উইকেট বিবেচনা করে ডারবান টেস্টে রেখেছেন দারুণভাবে ফিরে আসা জহির খানকে। তার সঙ্গে সামি-ইশান্তও রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ডারবান টেস্ট থেকে স্পিনার অশ্বিনকে সরিয়ে তার বদলি হিসেবে নেয়া হয়েছে ধোনির খুব প্রিয় স্পিনিং অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজাকে। যদিও প্রথম টেস্টের পর সাহসী স্মিথ ভারতীয় স্পিনার এমন উইকেটে ‘কাজে লাগেনা’ বলেছেন। স্মিথের দাম্ভিক উক্তির দাঁতভাঙা জবাব দিতে তাতিয়ে উঠতে পারেন অশ্বিনকে হঠিয়ে আসা জাদেজা।
নিশ্চিত জয়ের আবহে থাকা ওয়ান্ডারার্সের শেষ দিনে গণেশ উল্টে যাওয়ার জোগার হয়েছিল। মৃত্যুকূপ থেকে ড্র করে এখানে অনেক বেশি সাহসী ভারত। প্রথম টেস্টে শেষ দিন যা করে দেখাতে পারেনি; এবার তা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করবে ভারত। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলছেন, ‘প্রথম ৩ জনের মধ্যে যদি আপনার দলের ২জন বড় রান করতে পারে আর লম্বা জুটি হয়, একটা টেস্ট ম্যাচের অঙ্ক অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ভারতের বোলাররা ওয়ান্ডরার্সে প্রচুর খেটেছিল। ওদের ক্লান্তির সুযোগটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের নিতে হবে।’
হাফ চান্সের সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলাচ্ছে মর্নে মর্কেলকে। একটু ঝুঁকিই ছিল। তবে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রথম উইকেট নিয়ে তার প্রয়োজনীয়তা ঠিকই বুঝিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার ইমরান তাহিরকে এবারও তুলে রাখা হয়েছে। ওই প্রতিশ্রুতিশীল স্পিনারের খেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।
ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার গত ৪ টেস্টে হার বা ভারতের শেষবার জয় রেকর্ড যতই লোভনীয় হোক; বিশ্বের এক নাম্বার দলকে হারিয়ে সিরিজ জয় মোটেই সহজ হবে না ধোনিদের। অনতিক্রম্য সব রাস্তা অতিক্রম করে দেখানোর ক্ষমতা আছে বলেই এই দল বিশ্বের এক নাম্বার এবং ধারাবাহিকতায় অনন্য। তবে নতুন করে ইতিহাস তো তারাই রচনা করেন, যারা বিপজ্জনক সব রাস্তাতেও অকুতোভয় থেকে লক্ষ্যে অবিচলিত থাকতে পারেন। ২১ বছর ধরে ভারত ৫টি সফর করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা; কিন্তু সিরিজ জয়ের মুখ দেখেনি। তাই এবার ইতিহাস গড়ার হাতছানির চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কিই বা হতে পারে!
(দ্য রিপোর্ট/এএস/নূরুল/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)