জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৃতীয় কিস্তির প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ছাড় দিচ্ছে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে নেগোসিয়েশনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এরপরই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ও এডিবি ডেস্কের প্রধান সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে জানান, তৃতীয় কিস্তির এ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটারগেজ এবং ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হবে। এতে রেলের যাত্রী সেবার মান বাড়বে। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই নেগোসিয়েশন শুরুর জন্য একটি মিশন কাজ করেছে।

ইআরডি সূত্র জানায়, রেলওয়ে সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম নামের কর্মসূচির আওতায় অর্থ সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ কর্মসূচিটি ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল আর শেষ হবে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। এটি বাস্তবায়নে এডিবি মোট ৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে হিসেবে প্রথম কিস্তিতে দিয়েছে ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় কিস্তিতে দিয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এবার তৃতীয় কিস্তিতে দেবে ৮০০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ চতুর্থ কিস্তিতে আগামী বছর দেবে ৪০০ কোটি টাকা।

তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে জানা গেছে, নেগোসিয়েশনের পর এডিবির বোর্ডে এ ঋণ অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য রয়েছে। আগামী মাসে (জানুয়ারি) ভেটিং শেষে নেগোসিয়েশন হলে সরাসরি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা যাবে।

সূত্র জানায়, রাজস্ব আয় বাড়িয়ে রেলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে রেলখাতের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাপ্তও হয়েছে কয়েকটি প্রকল্প। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান সরকার দীর্ঘদিনের অবহেলিত রেলখাত উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছে। এ লক্ষ্যেই ২০০৯ ও ২০১০ দুই বছরে ২৮টি রেলসংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন করেছে। সেইসঙ্গে রেলের ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানের ঘোষণা আসে। রেলের অব্যবহৃত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চত করতেই এ উদ্যোগ।

সূত্র জানায়, আন্ত:বাণিজ্য উন্নয়ন, অধিকসংখ্যক যাত্রী ও মালামাল পরিবহন নিশ্চিত করা, বিভিন্ন ইয়ার্ড ও স্টেশনের পরিচালনা সুবিধা বৃদ্ধি, রেল যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, বিমানের জ্বালানি ও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র সমূহের জ্বালানি পরিবহনে আলাদা মালবাহী ট্রেন চালু করা এবং রেলের রাজস্ব আয় বাড়িয়ে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও ভারতীয় ঋণ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ এবং জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

রেলখাতে গৃহীত ও বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তের ট্র্যাকের উপর লোড মনিটরিং ডিভাইস সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮৫ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর-কঞ্চন-পঞ্চগড় এবং কাঞ্চন-বিরল মিটারগেজ সেকশনকে ডুয়েলগেজে এবং বিরল-বিরল বর্ডার সেকশনকে ব্রডগেজে রূপান্তরকরণ প্রকল্প, এটির ব্যয় জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ৯৮১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ময়মনসিংহ-জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, ব্যয় জেডিসিএফের ২১২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কসপ আধুনিকীকরণ প্রকল্প, ব্যয় জেডিসিএফের ২১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। দুর্ঘটনায় রিলিফ ট্রেনের জন্য ৬০ মেট্রিকটন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এমজি ক্রেন এবং ৮০ মেট্রিকটন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিজি ক্রেন সংগ্রহ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় জেডিসিএফের ১০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০০টি এমজি এবং ৬০টি বিজি যাত্রীবাহী গাড়ি পুনর্বন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ১২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ভারতীয় ঋণে রপ্তানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এটির ব্যয় ১ হাজার ১৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের মেইনলাইন সেকশনসমূহের পুনর্বাসন (পশ্চিমাঞ্চল) প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প, এটির ব্যয় ৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পাচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্প, এটির ব্যয় ২৬৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকট গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটারগেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্প, এটির ব্যয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে রেলের জন্য ১০টি ব্রডগেজ (বিজি) ডিজেল ইলেকট্রিক (ডি, ই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ২০৮ কোটি ৬০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে কন্টেনার পরিবহনের জন্য ৫০টি এমজি ফ্লাট ওয়াগন (বিএফসিটি) এবং এয়ার ব্রেকসহ ৫টি এমজি ব্রেকভ্যান সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ৩১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১২৫টি বিজি যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ৩৫৩ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১৮০টি বিজি বগি অয়েল ট্যাংক ওয়াগন এবং ৬টি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ১৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। কালুখালী-ভাটিপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ব্যয় ১০১ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ, ব্যয় ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশনের ১৩টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, ব্যয় ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের গৌরিপুর-জাজিরা- ঝাঞ্জাইল এবং শ্যামপুর-মোহনগঞ্জ সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), ব্যয় ১৮০ কোটি ৯০ লাখ ২২ হাজার টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ফৌজদারহাট-সিজিপিওয়াই-এসআরভি-চট্টগ্রাম সেকশনের পুনর্বাসন (প্রথম সংশোধিত), ব্যয় ৮৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং ১টি বিজি ও এমজি মিক্সসড আন্ডার ফ্লোর হুইল লেদ মেশিন সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত), ব্যয় ২০ কোটি ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে রেলওয়ে এ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু নির্মান প্রকল্প, ৯৫৯ কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৩০টি বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ৬০৭ কোটি ৭৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা। বিমানের জ্বালানি পরিবহনের জন্য এয়ার ব্রেক ইক্যুপমেন্টসহ ১০০টি এমজি বগি ট্যাংক ওয়াগন এবং ৫টি এমজি ব্রেকভ্যান সংগ্রহ প্রকল্প, ব্যয় ৭৭ কোটি ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ষোলশহর-দোহাজারী ও ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, ব্যয় ২০৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং রেলওয়ের জন্য ১৭০টি এমজি বিএফসিটি ও ১১টি এমজি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ৬০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/জেএম/নূরুল/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)