‘নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই’
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় দেশবাসীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো শক্তি এ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। এ নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই । ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জিটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জামায়াতকে জঙ্গিদল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তারা একাত্তরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর লুটপাট করেছে, আগুন দিয়েছে। এখন আবার তারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে। তাদের আর এদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্ করে বলেন, তিনি আন্দোলনের নামে সর্বত্র জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছেন। শুধু মানুষ হত্যা করেই তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না। গরুর ট্রাকে আগুন দিয়ে অবলা গরু হত্যা করছেন। তার প্রতিহিংসার আগুন থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। তার জন্ম ভারতের শিলিগুড়ি। তাই বাংলাদেশের প্রতি তার কোনো দরদ নেই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলাম আলোচনায় বসার জন্য। কিন্তু তিনি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন। তিনি শুধু আল্টিমেটাম দেন। আওয়ামী লীগ আল্টিমেটামে ভয় পায় না।
শেখ হাসিনা বিগত ৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে এসএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। গতবছর বিনামূল্যে ২৭ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। আগামী বছর ৩০ কোটি বই বিনামূল্যে দেওয়া হবে। স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কলেজ করা হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রতি উপজেলায় একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গত ৫ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের জন্য আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করেছি। দেশে ব্যাপক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছে। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামে থেকে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে পারছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ২৮ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রায় ১ কোটি মানুষের সরকারি-বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের মাথাপিচু আয় বেড়ে হয়েছে ১০৪৪ ডলার। ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা নিজেরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে সারা গোপালগঞ্জে সাজ-সাজ রব পড়ে যায়। সকাল থেকেই টুঙ্গিপাড়া জনসভাস্থলে লোকজন আসতে শুরু করে। বেলা আড়াইটায় জনসভাস্থল কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় জনসভাস্থলের আশপাশের রাস্তায়ও মানুষ অবস্থান নেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪ জনসভাস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন হাজার হাজার জনতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, রেডক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, আব্দুর রহমান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরীসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মুকসুদপুরে এক পথসভায় গোপালগঞ্জ-১ আসনে সাবেক বিমানমন্ত্রী লে. কর্নেল ফারুক খানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাসভবনে রাতযাপন করবেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তিনি কোটালীপাড়ায় কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
(দ্য রিপোর্ট/এসবি/এপি/নূরুল/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)