‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে অসহযোগে রূপ দিতে চায় জামায়াত
কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ঢাকা অভিমুখে রবিবারের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ দিতে চায় জামায়াতে ইসলামী। এজন্য সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে যে কোনোভাবে কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কর্মসূচিতে সরকারের বাধা আসার বিষয়টি মাথায় রেখেই ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক করছেন তারা।
সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়ে জামায়াত। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে দলটির নেতাকর্মীরা। কখনো জোটগতভাবে আবার কখনোবা নিজেরাই এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। তাদের এসব কর্মসূচির অধিকাংশই হয়ে উঠেছে সহিংস। ১৮ দলের কর্মসূচি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে হলেও জামায়াত-শিবিরের মূল দাবি শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করা।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে সন্তুষ্ট জামায়াত-শিবির। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ‘অস্তিত্বের প্রশ্ন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। তাই যে কোনোভাবে এ কর্মসূচি সফল করতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি বাসায় জামায়াত-শিবিরের যৌথ প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল জব্বার, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. সেলিম উদ্দিনসহ জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যৌথসভায় ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের করণীয় ঠিক করা হয়।
সূত্র জানায়, এ কর্মসূচি পালনে সরকার বাধা দেবে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই এগুচ্ছে জামায়াত-শিবির। শুধু তাই নয়, ২৯ ডিসেম্বরের আগে মাঠ পর্যায়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হবেন এমনকি শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও অনেকে গ্রেফতার হতে পারেন এমনটা ধরেই এগুচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার রাজপথ বা প্রবেশপথগুলো দখলে রাখতে চায় জামায়াত। এজন্য এ কর্মসূচিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে দলটি। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটাতে মরিয়া শীর্ষ নেতারা। এজন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ৫ লক্ষাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকের জমায়েত ঘটিয়ে ঢাকাকে অচল করতে চান তারা।
জামায়াত সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতার্মীরা ঢাকার দিকে মার্চ (আসা) করতে শুরু করেছে। রাজধানীতে যৌথবাহিনীর অভিযান চলার কারণে এসব নেতাকর্মী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসাবাড়ি ও নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলাতে আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় ব্যবস্থাপনায় থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে যে সব জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে সে সব জেলার নেতাকর্মীরা আগেভাগেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এসে পৌছেছেন বলে সূত্র জানায়।
রবিবার নয়াপল্টনের ১৮ দলের সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেওয়ার কথা। সমাবেশে যোগ দিতে আগেরদিন রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে বা বিভিন্ন হালকা যানবাহনে চড়ে নেতাকর্মীদের নয়াপল্টন এলাকায় অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে বা পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে ১৮ দল অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
সে ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। এ জন্য নেতাকর্মীদেরকে হাতে বাঁশের লাঠি সম্বলিত জাতীয় পতাকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশদ্বার ও আশপাশের জেলা থেকে সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে। এ সময় পর্যন্ত নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার এড়াতে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে।
সরকার যদি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে পিছু না হটে তাহলে অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকেও চাপ দেবেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে রবিবারের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এবং তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে।
এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করার লক্ষে জামায়াতের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেদিন ঢাকার বাইরে থেকেই জামায়াতের কয়েক লাখ লোক আসবে। আর ঢাকার জনশক্তি তো আছেই।
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে সরকারের পতন নিশ্চিত ও একদলীয় পাতানো নির্বাচন প্রতিহত করা হবে বলে জানান এ জামায়াত নেতা।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তারা বলেন, দলন-পীড়ন, সরকারের রক্তচক্ষু ও সকল বাধা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করা হবে। এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে গণদাবি আদায় করা হবে।
অন্য এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সরকার জনগণকে ভয় পাচ্ছে। সে জন্য তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ভণ্ডুল করার চক্রান্ত করছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করে দমন করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ, মিছিল জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং জনগণ যেকোনো মূল্যে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)