‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’
জনস্রোতের প্রস্তুতি বিএনপির
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে রাজধানীমুখী জনস্রোতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসমুদ্র তৈরি করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতেই তাদের এ টার্গেট। জনসমুদ্র থেকেই ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে ‘না’ বলে দেবে দলটি।
বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২৪ ডিসেম্বর তার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো নির্বাচনী প্রহসনকে ‘না’ ও গণতন্ত্রকে ‘হ্যাঁ’ বলা।
কর্মসূচি সফল করতে সারাদেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বৈঠক করে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের ঢাকা আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে শুক্রবার ঢাকা মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি সভা করবে বলে জানা গেছে।
‘সর্বশক্তি’ দিয়ে কর্মসূচি সফল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মহানগর বিএনপির এক নেতা। কৌশলগত কারণে আপাতত কোনো ধরনের হাঁকডাক দিতে চাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, সারাদেশ থেকে লোকসমাগমের টার্গেট করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার আশপাশের ৫/৬টি জেলা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের সব রকমের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। মহনগর বিএনপিসহ সকল অঙ্গ সংগঠন সমাবেশ সফল করার জন্য কাজ করছে। আমরা আশা করছি ব্যাপক লোকসমাগম হবে।’
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা আসছে কি না এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ঘোষিত আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা আসলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশ থেকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে যোগ দিতে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরাই নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করছি সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় আসতে পারবে।’
জানা গেছে, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই প্রতিটি জেলার নেতারা বৈঠক করছেন। সরকারি বাধা উপেক্ষা করে কিভাবে কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীকে বিরোধী দলের দখলে নেওয়া যায়, সে কৌশল নির্ধারণ করছেন।
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি পেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত দাবি করে কর্মসূচি সফলে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দ্য রিপোর্টকে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, অতীতের মতোই এবারও আমাদের জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি লোকজন কর্মসূচিতে যোগ দেবে।
সরকারের বাধা প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট তৈমুর বলেন, বর্তমানে ‘অবৈধ’ এই সরকার সব সময়ই গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আসছে। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। এর আগেও আমরা বাধা অতিক্রম করে কর্মসূচি সফল করেছি। এবারও করবো। তবে, সরকার এবার বাধা দিলে যেখানে বাধা, সেখানেই অবস্থান নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় বিশেষ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা দ্য রিপোর্টকে বলেন, শেখ হাসিনার ‘তামাশা’র নির্বাচন বন্ধ করতে ও দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে দেশনেত্রী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দিয়েছেন। তার আহ্বানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় হাজির হবে।
নাদিম বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ‘ফ্যাসিস্ট’ দল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। সে কারণে সব সময়ই আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আসছে। এবারও তার অন্যাথা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। যৌথবাহিনী দিয়ে তারা ইতোমধ্যেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি শুরু করেছে। ঘর ছাড়া করেছে। তবে এ সব বাধা উপেক্ষা করেই রাজশাহী জেলা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবে। ইতোমধ্যেই অনেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, কর্মসূচি সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। কৌশলগত কারণে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের ‘যে যার মতো’ করে ঢাকায় চলে যেতে বলা হয়েছে। অনেকেই এর মধ্যে ঢাকা চলে গেছেন।
লোকসমাগম সম্পর্কে মোশাররফ বলেন, ‘এটি হবে ঐতিহাসিক সমাবেশ তাই এখন বলা মুশকিল। তবে হাজার হাজার নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন।’
রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান দ্য রিপোর্টকে বলেন, নেত্রী ডাক দিয়েছেন। রাঙ্গামাটি এলাকার মানুষ আসবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে তার জবাব দিতেই রাঙ্গামটির জনগণ ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ডাকে সাড়া দেবে।
ঢাকা আসার ব্যাপারে সরকারের বাধার প্রসঙ্গে দীপেন বলেন, ‘কর্মসূচি অবশ্যই সফল হবে। তবে আমরা কিভাবে যোগ দিবো এখন কিছুই বলা যাবে না।
প্রসঙ্গত ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘মার্চ পর ডেমোক্রেসি’ নামে ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এসবি/রাসেল/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)