দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রাপ্ত বেতন-ভাতার বাইরে মন্ত্রীদের উপার্জিত অন্য সকল আয় অবৈধ বলে দাবি করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন)।

তারা বলেন, সংবিধানের ১৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ সাংবিধানিক আটটি পদের ব্যক্তিদের বেতন-ভাতার বাইরে অন্য সকল আয়ের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপিত আছে।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ড. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, নেছার আমিন উপস্থিত ছিলেন।

শাহদীন মালিক বলেন, সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতার পরেও মন্ত্রীদের যে পরিমাণ আয় বেড়েছে তা অস্বাভাবিক। এ ঘটনায় স্পষ্টত সংবিধান লংঘন হয়েছে।

রেজওয়ানা হাসান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব তাদের এই আয় খতিয়ে দেখা। তারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয় তবে নাগরিকদের পক্ষ থেকে মামলা করা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে নবম সংসদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ ৪৮ জন প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া তথ্য তুলে ধরেন। পাঁচবছরে এই ৪৮ জন প্রার্থীর গড় আয় বেড়েছে ৫৮২ শতাংশ। মন্ত্রীদের বেড়েছে ২৪৩ শতাংশ; প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ শতাংশ; সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপদের ৩০৭১ শতাংশ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকারের আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৩৬ ও ৪৪৩৫ শতাংশ।

হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৩২৯৮৫ শতাংশ, আব্দুল মান্নান খানের ৮৪২২ শতাংশ, মো. মাহবুবুর রহমানের ৮০০৭ শতাংশ, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ৪৪৩৫ শতাংশ, ড. হাছান মাহমুদের ২০৩৬ শতাংশ এবং মো. আফছারুল আমীনের আয় ২৪৮০ শতাংশ বেড়েছে।

টাকার অংকে সর্বোচ্চ বেড়েছে নূর-ই-আলম চৌধুরীর ১৪ কোটি ৭৭ লাখ ৭২ হাজার ৮শ’ ৮৭ টাকা; আফছারুল আমীনের ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩শ’ ২৮ টাকা; আব্দুল মান্নান খানের ৩ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার ২শ’ ৩৭ টাকা, হাছান মাহমুদের ২ কোটি ৩ লাখ ২ হাজার ৮শ’ ৮০ টাকা এবং মাহবুবুর রহমানের এক কোটি ৭২ লাখ ১৪ হাজার ৭শ’ টাকা।

অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বাড়া স্বাভাবিক’। এ প্রসঙ্গে শাহদীন মালিক বলেন, তিনি সংবিধান না জেনেই কথা বলেছেন।

এদিকে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- আবুল মাল আব্দুল মুহিত, গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মজিবুর রহমান ফকির, ওমর ফারুক চৌধুরী ও আ স ম ফিরোজের আয় হ্রাস পেয়েছে।

সুজন দাবি করেছেন, প্রার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই বর্তমানে ঋণ গ্রহীতা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আ স ম ফিরোজের ২১ কোটি ৯৩ লাখ ৮৫ হাজার ২শ’ ১৩ টাকা; মির্জা আজমের ১১ কোটি টাকা; ড. আব্দুর রাজ্জাকের ৯ কোটি ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা; ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা; জাহাঙ্গীর কবির নানকের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা; এ বি তাজুল ইসলামের ২ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৫শ’ ৫২ টাকা, আ ফ ম রুহুল হকের এক কোটি টাকা।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হলফমানায় দেওয়া অনেকের অনেক তথ্যই আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও এমপি-মন্ত্রী হয়ে তা ভুলে যান। কেউ কেউ মনে হয় আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এপি/এমডি/রাসেল/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)