হিজবুত তাহরীর সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা, আটক ৩১
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে হিজবুত তাহরীর সমাবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম, সেগুনবাগিচা, মৎস্যভবন, পল্টন, প্রেস ক্লাব, বিজয়নগর, দৈনিক বাংলা ও গুলিস্তান এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে পুলিশ ১৪ জন, বিজয়নগর, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে ১৫ জন এবং দৈনিক বাংলা থেকে দুজনকে আটক করে। এছাড়া বিজয় নগর পানির ট্যাংকির উল্টাপাশে একটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় মুক্তাঙ্গনে হিজবুত তাহরীরের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে ওইসব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে চোরাগোপ্তা হামলা করে হিজবুত তাহরীরের কর্মীরা। পুলিশও তাদের প্রতিরোধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়।
হিজবুত তাহরীরের কর্মী মোহাম্মদ জাফর একটি লিফলেট দিয়ে দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার অপসারণ দাবিতে তাদের মুক্তাঙ্গনে পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশে আসতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়।
লিফলেটে দেখা গেছে ‘হাসিনা-খালেদা নিপাত যাক, দেশবাসী মুক্তি পাক’। আরো লেখা রয়েছে- ‘হে দেশবাসী। আওয়ামী লীগ–বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিকবাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের নিকট দাবি তুলুন এবং এ দাবিতে রাজপথে নেমে আসুন।’
দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদক জানান, রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে হিজবুত তাহরীরের মিছিলে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় হিজবুত তাহরীরের পাঁচ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল বের করে হিজবুত তাহরীরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা লিফলেট বিতরণ করতে থাকে। পুলিশ ওই মিছিল লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশ মুহিন, খোরশেদ, খালেদ, মুগ্ধ ও মিরাজুলকে আটক করে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে সেগুনবাগিচা থেকে হিজবুত তাহরীর ১৪ কর্মীকে আটকে করে পুলিশ। তারা হলেন- মুহিন, খালেদ, খোরশেদ, মুগ্ধ, মিজানুর রহমান, হসিবুর রহমান, সালমান, সালাউদ্দিন, মেজবানুর রহমান, আজাদ, রকিব, জাফর সাদিকসহ পুলিশের এক এসআইয়ের ছেলে আকাশ। আটক অপর একজনের কাছে বারবার নাম জানতে চাইলেও সে তার নাম প্রকাশ করেনি।
শাহাবাগ থানার ওসি শহিদুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে। মিডিয়া সেলে বিস্তারিত জানানো হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে হিজবুতকর্মীরা ওই এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও মিছিল শুরু করে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসালাম প্রেস ক্লাবের সামনে থাকা পুলিশের ভ্রাম্যমান টিমকে ফোন করেন। পরে পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হিজবুতকর্মীরা এ সময় পালিয়ে যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন হিজবুতকর্মীদের আটকে পুলিশকে সহায়তা করেন।
এদিকে, হিজবুত তাহরীরের সমাবেশ ও মিছিল প্রতিরোধে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। একই সঙ্গে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পল্টন, প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন এলাকায় সশস্ত্র অবস্থান নেয়।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি আশরাফুজ্জামান দুই প্লাটুন পুলিশ নিয়ে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেন। তিনি সেসময় দ্য রিপোর্টকে বলেন, হিজবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। অনুমতি না নিয়ে তারা সমাবেশ ও মিছিল কারা চেষ্টা করছিল। তা প্রতিরোধে মুক্তাঙ্গনের আশেপাশে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
দ্য রিপোর্টের ঢাকা মেডিকেল প্রতিবেদক জানান, হিজবুত তাহরীরের কর্মী ওবায়দুল ইসলাম (২৪) শুক্রবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনেট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলির স্প্লিন্টার তার গলা ও মুখে বিদ্ধ হয়। সেগুনবাগিচা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওবায়দুল ইসলাম জানায়, সে এয়ারপোর্ট রোডের বিসমিল্লাহ বিরানি হাউজের বয় হিসেবে কাজ করে।
পরে শাহবাগ থানার এসআই আবু আনসার হিজবুতকর্মী মো. আল মামুন (২৫) ও মনিরুল ইসলামকে (২৬) ডিএমসিতে নিয়ে আসেন। মামুনের মাথায় ও মনিরুলের বাম পায়ে শর্টগানের গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।
এসআই আবু আনসার জানায়, থানা থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এছাড়া পল্টন থানা পুলিশ আহত চারজনকে ডিএমসিতে নিয়ে আসে। আহতরা হলেন- আবু বকর (২০), আবু হেনা সমুন (৩৫), মাহাদি উজ্জামান (৩৭) ও ওয়াহিদ (২৬)। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম তাদের হাসপাতালে আনেন।
আবু বকর ও ওয়াহিদের শরীরে পেটানোর আঘাত, সমুনের চোখ, মুখ, বুক ও পেটে; মাহাদির মাথায় শর্টগানের গুলির স্প্লিন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এসএস/ডি/এসআর/কেজিএন/কেএন/এপি/এমএআর/এমডি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)