৯২ জন ‘ডাবল এমপি’
সংবিধান অনুযায়ী নবম সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। বর্তমান সংসদের এমপিদের মধ্যে যারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম সংসদের সংশ্লিষ্ট আসানের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে অনেকেই ‘ডাবল এমপি’ বলে অভিহিত করছেন। সংখ্যায় তারা ৯২ জন।
আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদল মিলিয়ে আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্রদলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসছে না। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ট আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট।
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমি কখনো এভাবে নির্বাচিত হতে চাইনি। এর আগে ২০০১ সালে ও ২০০৮ সালে অর্ধলক্ষাধিকের বেশি ভোট পেয়ে এমপি হয়েছি। এবার বিরোধী দল না আসায় সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এইভাবে নির্বাচিত হতে হলো।
জাতীয় পার্টি থেকে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একেএম মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার পার্টি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করছি। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
অনেক সমালোচনা হচ্ছে এই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে ...। জবাবে মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পার্টির বাইরে গিয়ে কথা বললে দলে অবস্থান থাকবে না। তাই ব্যক্তিগতভবে আমার যে মতই থাকুক না কেন, আমাকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
যারা ডাবল এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্যরা হলেন- জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ভোলা-১ আসনে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সিলেট-১ আসনে আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুনামগঞ্জ-২ আসনে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, চাদপুর-১ আসনে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাদারিপুর-২ আসনে শাজাহান খান, নোয়াখালি-৫ আসনে ওবায়দুল কাদের, চাদপুর-৩ আসনে যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, ঢাক-১৩ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক, টাঙ্গাইল-১ আসনে ড. আবদুর রাজ্জাক, দিনাজপুর-২ আসনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, চট্টগ্রাম-৭ আসনে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ শেখ ফজলে নূর তাপস, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা সাঈফ মিনহাজ নতুন ভোটার হয়েছেন এবার। তার কাছে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজের এলাকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা শিক্ষিত হয়ে উঠছি। রাজনীতিবিদরা যা ইচ্ছা তাই করলে মানুষ মানবে না। আমার ভোটের প্রয়োগ করতে পারলাম না তাহলে আমাকে ভোটার বানিয়ে লাভ কি হলো? এরকম নির্বাচন আমরা চাইনা।
আওয়ামী লীগের শরীক দলগুলোর উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির রয়েছেন রয়েছেন- ময়মনসিংহ-৪ আসনে রওশন এরশাদ, ঢাকা-৮ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রমুখ।
এ ছাড়াও বর্তমান এমপিদের মধ্যে যারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দবিরুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে এইচ এম আশিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে একেএম মাইদুল ইসলাম, গাইবান্দা-৫ ফজলে রাব্বি মিয়া, বগুড়া-৫ হাবিবুর রহমান, চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আবদুল ওয়াদুদ, নওগাঁ-১, ২, ৬ আসনে যথাক্রমে সাধন চন্দ্র মজুমদার, শহীদুজ্জামান সরকার ও ইসরাফিল আলম। রাজশাহী ১, ৪ ও ৫ আসনে যথাক্রমে ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রকৌশলী এনামুল হক ও আবদুল ওয়াদুদ। নাটোর-৪ আসনে আবদুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ইসহাক হোসেন তালুকদার, পাবনা-৪ ও ৫ আসনে যথাক্রমে শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন, নড়াইল-১ কবিরুল হক মুক্তি, বাগেরহাট-১, ২ আসনে যথাক্রমে হেলাল উদ্দিন ও মীর শওকত আলী বাদশা।
খুলনা-৫ আসনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাতক্ষীরা-৩ আসনে আ ফ ম রুহুল হক, পটুয়াখালী-২ ও ৪ আসনে যথাক্রমে আ স ম ফিরোজ ও মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ভোলা-১ ও ৪ আসনে যথাক্রমে তোফায়েল আহমেদ ও আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যকব, ঝালকাঠি-২ আসনে আমির হোসেন আমু, পিরোজপুর-১ আসনে একেএমএ আওয়াল, টাঙ্গাইল-১, ৪, ৭ ও ৮ আসনে যথাক্রমে ড. আবদুর রাজ্জাক, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, একাব্বর হোসেন এবং শওকত মোমেন শাহজাহান, জামালপুর-৩ আসনে মির্জা আজম, ময়মনসিংহ-১ আসনে প্রমোদ মানকিন, নেত্রকোনা-৪ ও ৫ আসনে যথাক্রমে রেবেকা মোমেন ও ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, কিশোরগঞ্জ-৪, ৫, ও ৬ আসনে যথাক্রমে রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক, আফজাল হোসেন এবং নাজমুল হাসান পাপন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জাহিদ মালেক স্বপন, ঢাকা-৩, ১০, ১১ ও ১৪ আসনে যথাক্রমে নসরুল হামিদ বিপু, একেএম রহমত উল্যাহ, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আসলামুল হক, গাজীপুর-১, ২, ৩ ও ৫ আসনে যথাক্রমে আকম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল, রহমত আলী ও মেহের আফরোজ চুমকি, নরসিংদী-৪ ও ৫ আসনে যথাক্রমে নূরুল মজিদ হুমায়ূন এবং রাজিউদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-২ ও ৫ আসনে যথাক্রমে নজরুল ইসলাম বাবু ও নাসিম ওসমান। রাজবাড়ী-১ ও ২ আসনে কাজী কেরামত আলী ও জিল্লুল হাকিম, ফরিদপুর-১ ও ৩ আসনে যথাক্রমে আব্দুর রহমান ও খন্দকার মোশারফ হোসেন, মাদারীপুর-২ আসনে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, শরীয়তপুর-১, ২ ও ৩ আসনে যথাক্রমে বিএম মোজাম্মেল হক, কর্নেল (অব.) শওকত আলী ও নাহিম রাজ্জাক, সিলেট-৩ ও ৬ আসনে মাহমুদ-উস কায়েস চৌধুরী এবং নূরুল ইসলাম নাহিদ, মৌলভীবাজার-৩ ও ৪ আসনে সৈয়দ মোহসীন আলী ও উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে ক্যপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা ৭, ১০ ও ১১ আসনে অধ্যাপক আলী আশরাফ, আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং মুজিবুল হক মুজিব, চাদঁপুর-৫ আসনে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, নোয়াখালী-৪ ও ৫ আসনে একারামুল করিম চৌধুরী এবং ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম-১, ৮ ও ১০ আসনে যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মইন উদ্দীন খান বাদল এবং আফসারুল আমিন।
(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এসবি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)