রাজধানীতে বাসা বাড়ির তালা ভেঙ্গে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, রবিবার বিরোধী দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংগ্রহণকারী নেতাকর্মীর মধ্য থেকে নাশকতা ও সহিংসতাকারীদের আটকের জন্যই যৌথ বাহিনী এভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চলে মিরপুরে। সেখানকার একাধিক অধিবাসী দ্য রিপোর্টকে এই তথ্য জানান।

মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার ৩৯/৫ নম্বর বাসার ৫ তলার ভাড়াটিয়া মোসাম্মত কুলসুম বেগম বলেন, ‘ভোর রাত ৪টার দিকে বাসার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করেছে। তালা ভাঙার শব্দে ৫ তলার সকল ভাড়াটিয়া আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের বাসাসহ আশপাশের বাসা থেকে অন্তত ৪০জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে আমার স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলেও রয়েছে।’

কুলসুম জানান, তার স্বামী মোকাদ্দেস একজন ব্যবসায়ী। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে মোঃ আশরাফুল ইসলাম (১৮) শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে শরীফুল ইসলাম মিরপুর আদর্শ স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তার স্বামী বা ছেলেরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। অথচ ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে আটক করে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কি কারণে নিচ্ছে বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী এ বিষয়ে কিছু বলেনি যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তারা থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। পরে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের শিক্ষকরা গিয়ে তার ছেলেদের থানা হাজত থেকে মুক্ত করেন।

মিরপুর থানায় শুক্রবার সকালে আতাউর রহমান বলেন, আমার ভাই আরিফুর রহমান কল্যাণপুরে শামীম কমিশনারের বাসায় ভাড়া থাকে। শামীম স্থানীয় বিএনপি নেতা। আমার ভাই আইএসটিআই কলেজে বিবিএ পড়ছে। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। শুধুমাত্র বিএনপি নেতার বাসায় ভাড়া থাকার কারণে আমার ভাইকে আটক করা হয়েছে। রাতে বাসার তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে যৌথ বাহিনী।

যশোর প্রেস ক্লাবের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছোটভাই মহিবুল ইসলাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে। সে বন্ধুদের সঙ্গে একটি মেসে থাকত। পুলিশ রাতে তার বন্ধুদের সঙ্গে গ্রেফতার করে। আমি সকাল থেকে ৪ ঘণ্টা মিরপুর মডেল থানায় অবস্থান করার পরও আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি।

মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে আটকদের স্বজনেরা অবস্থান করছে। তাদেরকে থানায় ঢুকতে বা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি থানা থেকে আটকদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।

গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর্মসূচির আড়ালে বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা করছে দুর্বৃত্তরা। আর এর উপর ভিত্তি করে রাজধানীতে চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান। বুধবার রাত ১২টা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে অনেক আবাসিক এলাকাতে। যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়াসহ আশপাশের এলাকায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর এলাকার কল্যাণপুর, দারুস সালাম, রূপনগর, কাফরুল, পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব, বিজিবি, ঢাকা মহানগর পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে ১৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

নগরবাসীকে হয়রানি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, তালা ভেঙ্গে কারা বাসায় প্রবেশ করা হচ্ছে না। যৌথ অভিযানের অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যকে নগরবাসীর সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নিরপরাধ ব্যক্তিদের আটক করা হলে- তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সম্মানের সঙ্গে তাদের ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/নূরুল/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)