হলফনামার তথ্য : আলাদিনের চেরাগের কেরামতি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ৪৮ জন প্রার্থীর আয় বেড়েছে গড়ে ৫৮২ শতাংশ। এর মধ্যে ডেপুটি স্পিকারের আয় বেড়েছে চার হাজার ৪৩৫ শতাংশ। আর আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর। তার আয় বৃদ্ধির হার ৩২ হাজার ৯৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রীর আয় বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এ তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপদের আয় বেড়েছে গড়ে তিন হাজার ৭১ শতাংশ। মন্ত্রীদের আয় ২৪৩ ও প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ শতাংশ বেড়েছে। আয়োজকরা জানান, রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ২০০৮ ও ২০১৩ সালে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য নিয়ে তারা এই হিসাব বের করেছে।
হলফনামা প্রকাশে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদের আপত্তির পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ সংক্রান্ত আইন খতিয়ে দেখার কথা বলেছিল। কিন্তু বিনা নোটিশে তাদের ওয়েবসাইট থেকে হলফনামা উধাও হয়ে গেলে সে সময় সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। যদিও পরবর্তী সময়ে ইসির ওয়েবসাইটে হলফনামা ফিরে এসেছে। তবে কী কারণে হলফনামা উধাও হয়েছিল তার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।
যে কয়েকজনের তথ্য সুজন তুলে ধরেছে তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এই পদগুলো ব্যক্তিগত অর্থ আয়ের উৎস হতে পারে তেমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে এ সব খবর আসার পরে সরকারি দলের লোকজন বলার চেষ্টা করেছেন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেই তাদের আয় বেড়েছে। সরকার পক্ষের এই বক্তব্য আমরাও গ্রহণ করতে চাই। তবে সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায় এই প্রবৃদ্ধির কত শতাংশ পাওয়ার অধিকার রাখেন ক্ষমতাসীনরা আর ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধিকে জাতীয় প্রবৃদ্ধি হিসাবে দেখানোই বা কতটা সমীচীন।
যদি এই অঢেল সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎস জনগণের সামনে হাজির বা উপস্থাপিত না হয়, তাহলে এই সম্পদ অবৈধ পন্থায় অর্জন বলে জনমনে বিশ্বাস জন্মাবে।
জনগণ আরও বিশ্বাস করবে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা মানেই ‘আলাদিনের চেরাগ’, গত পাঁচ বছরে যার কেরামতিতে সরকারের দায়িত্বশীল পদাধিকারীরা অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন।