গণপরিবহন নেই, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী। কর্মসূচির আগের দিন শনিবার সকাল থেকে রাস্তায় যানবাহন না থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। সদরঘাটে ভোরের দিকে একটি লঞ্চ ভিড়লেও যাত্রী ছিল খুবই কম। পরে ওই লঞ্চ থেকে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করা হয়।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম বলেন, নাশকতার সন্দেহে ১০ জন আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ঢাকার স্ট্যান্ডগুলোতে আসতে দেখা যায়নি কিংবা রাজধানী থেকে ছেড়েও যায়নি।
এদিকে, শুক্রবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাইরের জেলা থেকে কোনো পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। অন্যদিকে, যে কোন নাশকতার আশংকায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েনের পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চলছে। চলছে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল।
শনিবার সকালে কর্মমুখী মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে পড়েন চরম ভোগান্তিতে। নগরীর দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও বেসরকারি অফিস খোলা থাকলেও পাবলিক পরিবহন ছিল প্রায় বন্ধ। রিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং কিছু কিছু সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া রাস্তায় তেমন কোন যানবাহন চলাচল করছে না।
হাজার হাজার মানুষকে বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, শ্যামলী, ধানমন্ডি, মতিঝিল, গুলিস্তান, গাবতলী, কল্যাণপুরসহ নগরীর আরও কিছু এলাকা ঘুরে মিলেছে এমন চিত্র।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসতে বিএনপি-জামায়াতের রিজার্ভ করা যানবাহনগুলোও প্রশাসন আটকে দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে রাস্তায় সাধারণের চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতেও পরিচিতজন ছাড়া কাউকে সিটভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় আসা লোকজন হোটেলে উঠতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হন।
মোটরচালক লীগের হরতাল :
মোটরচালক লীগের ডাকা দুই দিনব্যাপী হরতাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় সরকার সমর্থিত সংগঠনটি।
মোটরচালক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি আবু তাহের উদ্দিন এ হরতালের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চক্রান্ত এবং আন্দোলনের নামে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করছে বিএনপি-জামায়াত। আবার সেই পরিবহন দিয়েই ঢাকায় কথিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র নামে বিএনপি-জামায়াতের অরাজকতা সৃষ্টির কর্মসূচি রুখতে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হবে। অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি, দোকান-পাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলেও জানান তিনি।
নাশকতার আশংকা :
বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার আশংকা করছে সরকার। সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতারাও বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে। সবখানে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করা হচ্ছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই আটক করছে পুলিশ। ঢাকার সবগুলো রাস্তার দৃশ্যপট অন্যদিনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফাঁকা রাস্তা। রাস্তার পাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। সকালে অফিসমুখী অনেককেই পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে দেখা গেছে।
রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন :
রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঈশ্বরদী, রংপুর, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, বগুড়া থেকে কোনো বাস আসেনি কিংবা ছেড়ে যায়নি। এসব টার্মিনালে সারি সারি বাস অবস্থান করছে। কোন গাড়িই চলছে না। এ ব্যাপারে হানিফ পরিবহনের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত কোন নির্দেশ না এলেও মৌখিক নির্দেশ এসেছে। এছাড়া, ভাংচুরের আশংকায় বিআরটিসির গাড়িগুলো ডিপো থেকে বের হয়নি। বরিশাল থেকে কোন পরিবহনের বাস আসেনি।
রেলপথ: রেলপথে যাত্রীবেশে যাতে বিরোধী দলের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে কেউ যোগ দিতে না পারে, সে জন্য ঢাকার বাইরের সব স্টেশন থেকে আসনবিহীন টিকিট বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টানা অবরোধের কারণে এমনিতেই রেলের সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। এর পরও ঢাকামুখী ট্রেনগুলোকে বিভিন্ন স্টেশনে কারণে-অকারণে থামিয়ে রাখার নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন একাধিক রেল কর্মকর্তা।
নৌপথ: নৌপথে পুলিশ ও শ্রমিক লীগ মিলে লঞ্চ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘাট শ্রমিক লীগ পাহারা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোলায় পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পাহারা বসিয়েছেন লঞ্চঘাটে।
ভোলার ২০টি ঘাট থেকে ঢাকা, বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি ট্রাক, ফেরি, ইঞ্জিনের নৌকা ছেড়ে যায়নি। ভোলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। এছাড়া পটুয়াখালী থেকেও কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসেনি।
(দ্য রিপোর্ট/এস/এইচবি/এমএআর/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩)