আওয়ামী লীগের ইশতেহার
মৌলিক প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্যের উদ্যোগ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে। শনিবার বিকেলে দলটির সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইশতেহার প্রকাশ করবেন।
প্রধান বিরোধী দল ছাড়া এই নির্বাচনে ভোটের উৎসবের বিপরীতে দেশব্যাপী চলছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে আগেই।
বরাবর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর পরই ইশতেহার ঘোষণা করা হলেও এবার দলটির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির এই দলিল প্রকাশ পাচ্ছে ভোট গ্রহণের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনী প্রচারণা শেষের ৫ দিন আগে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়ে বলা হয়,‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত এবং নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সিভিল সমাজসহ দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
সুশাসন বিষয়ে বলা হয়,‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম জোরদার করা হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ ও স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।’
‘দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা আরও বাড়ানো হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিজেদের সম্পদ, আয়-রোজগার সম্পর্কে সর্বস্তরের নাগরিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।’
নির্বাচন কমিশন বিষয়ে বলা হয়েছে,‘ইতোমধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে সূচনা হয়েছে তা সংহত এবং শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করা হবে। যুগের প্রয়োজনে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’
মুদ্রানীতি বিষয়ে উল্লেখ করা হয় যে,‘শুল্ক-কর নীতি হবে ব্যবসাবান্ধব। সরকারের ঘাটতি ব্যয় পরিমিত পর্যায়ে রাখা হবে। মুদ্রাবিনিময় নীতি হবে নমনীয়। বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে।’
বেশকিছু খাতে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাহাজ নির্মাণ, হাল্কা প্রকৌশল, ঔষধ, প্লাস্টিক, খেলনা, গৃহস্থালি সহায়ক সামগ্রী, আইটি, চামড়া ও রাসায়নিক শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় শিল্প চিহ্নিত করে আগ্রহী ও দক্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের শুল্ক-কর ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’
বিদ্যুৎ জ্বালানি বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে,‘২০১৬ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। ২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেগাওয়াট; কিন্তু শিল্পায়ন ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে।’
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কয়লাসম্পদের যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবহারের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ১৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইতোমধ্যে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করা হবে। ২০৩০ সালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিস্যা হবে প্রায় ৫০ শতাংশ।’
গ্যাসের বিষয়ে বলা হয়,‘উত্তোলনে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অবশিষ্ট জেলাগুলোয় গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপচয় হ্রাসের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গ্যাসের মজুদ সীমিত বিধায় ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির যে প্রক্রিয়া চলছে তা সম্পন্ন করা হবে এবং এজন্য মহেষখালী দ্বীপে এলএনজি টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।’
দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শিরোনামে বলা হয়,‘২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের অনুপাত ১৫ শতাংশেরও নিচে অর্থাৎ ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা। ইতোমধ্যে বার্ষিক দারিদ্র্য হ্রাসের হার নির্ধারিত ১.৭ থেকে ২.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নির্ধারিত হার ছাড়িয়ে অর্জিত হার বজায় থাকলে ২০২১ সালের আগেই অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরেই দারিদ্র্যের অনুপাত ১৫ শতাংশে নেমে আসবে।’
সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বলা হয়,‘বর্তমান অভিজ্ঞতার নিরিখে বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ শুরু হবে ২০১৮ সালে। এবং ২০২১ সালে সকলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হবে।’
কৃষি ক্ষেত্রে বলা হয়,‘কৃষি গবেষণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাটের মতো অনাবিষ্কৃত অন্যান্য অর্থকরী ফসলের জীবনরহস্য আবিষ্কার এবং খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের সূচিত ধারাকে আরও বেগবান করা হবে। জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উদ্ভাবন ও ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
বিজ্ঞান সম্মত ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বলা হয়, ‘শিল্পায়ন, আবাসন ও ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে আবাদযোগ্য ভূমি ও জলাশয়ের পরিমাণ হ্রাসের উদ্বেগজনক হার নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানসম্মত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের সব জমির রেকর্ড ডিজিটালাইজড করার কাজ সম্পন্ন করা হবে। জমির সর্বোচ্চ যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। খাস জমি, জলাশয় এবং নদী ও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা জমি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভূমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন হত-দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
শিক্ষা ও মানব উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে দলটি তার ইশতেহারে উল্লেখ করে,‘ প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হবে। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে গঠিত প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে স্নাতক পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করা হবে। ভর্তির হার ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিনামূল্যে বই বিতরণ বাড়ানো হবে।’
‘উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং ভর্তি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। বেসরকারি খাতে উপযুক্ত মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদানের নীতি অব্যাহত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা উৎসাহিত করা হবে।’
‘স্কুল ও কলেজের পরিচালন ব্যবস্থাকেও দলীয়করণমুক্ত, অধিকতর গণতান্ত্রিক, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক, দায়িত্বশীল এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হবে।’
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিষয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, ‘সফটওয়্যার শিল্পের প্রসার, আইটি সার্ভিসের বিকাশ, দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকুবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন এসব কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। একই সঙ্গে আউট সোর্সিং ও সফটওয়্যার রপ্তানি ক্ষেত্রে সকল প্রকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। দেশজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা যেমন থ্রি-জি চালু হয়েছে। ফোর-জি-ও চালু করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা হবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ে বলা হয়, ‘মাতৃমৃত্যু হার ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হাজারে ১৪৩ জন অর্জন এবং আরও কমানোর কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও জোরদার করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ুষ্কাল ৭২ বছরে উন্নীত এবং জন্ম হার হ্রাসের লক্ষ্যে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নীতি কার্যকর করা হবে। ’
নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতার বিষয়ে বলা হয়, ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে কেবল সংখ্যাগত সাম্য প্রতিষ্ঠাই নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি অব্যাহত থাকবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি, বৈষম্য বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে গৃহীত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে।’
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বিশেষ আহ্বান থাকছে এবারের ইশতেহারে। ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বয়সে তরুণ। বাংলাদেশ প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা সৃজনশীল সাহসী তরুণ-তরুণীদের দেশ। তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, তাদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ অবারিত করা এবং জাতীয় নেতৃত্ব গ্রহণে সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের হাতে আগামী দিনের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্বভার ন্যস্ত করবে।’
যোগাযোগ খাতের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ , ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চার লেন নির্মাণ সমাপ্তকরণ এবং পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর-পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া, ঢাকা-মংলা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চার লেন নির্মাণের প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের বিদ্যমান সড়কপথগুলোর প্রশস্তকরণ এবং দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন সড়কপথ নির্মাণ করা হবে।’
‘দ্বিতীয় যমুনা সেতু ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে।’
‘ঢাকার অদূরে আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তাবিত সর্বাধুনিক বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণ এবং নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’
মাদকাসক্তি প্রতিরোধ বিষয়েও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয় ইশতেহারে। বলা হয়েছে, ‘অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঘোষিত তামাক ও তামাক-জাত বিড়ি-সিগারেট সেবনকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে তামাকের আবাদ ও বিড়ি-সিগারেটের উৎপাদন-বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুয়া ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।’
শ্রমিক ও প্রবাসীদের কল্যাণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১৫, ২৮, ৩৮ ও ৪০ অনুচ্ছেদের আলোকে এবং আইএলও কনভেনশন অনুসরণে শ্রমনীতি ও শ্রমিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। জীবনধারণের ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও পুনর্নিধারণ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। এ জন্য মজুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের ভূমিকা বৃদ্ধি করা হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসে কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী শ্রমজীবীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালক উপাদান। বিভিন্ন দেশে আরও বেশি সংখ্যায় প্রশিক্ষিত কর্মী প্রেরণ এবং তাদের শ্রমলব্ধ অর্থের আয়বর্ধক এবং লাভজনক বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।’
পরিকল্পিত নগরায়ন বিষয়ে বলা হয়, ‘২০১১ সালের লোক গণনা অনুসারে বাংলাদেশে শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ। নগরায়নের মাত্রা প্রায় ২৮ শতাংশ। নেপাল বাদ দিলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন কমানোর লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। ইউনিয়ন সদর, উপজেলা সদর ও শিল্পাঞ্চলগুলোতে পরিকল্পিত জনপদ ও গ্রামীণ-শহর গড়ে তোলা হবে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কৃষি জমি ও জলাশয় হ্রাসের হার কমানো এবং ভূমির সর্বানুকূল ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।’
গণমাধ্যম ও তথ্য অধিকার বিষয়েও বেশকিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে, ‘সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং অবাধ-তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার নীতি অবিচলিতভাবে অব্যাহত রাখা হবে। জনগণের তথ্য জানা এবং সরকারের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন এবং তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের ফলে সামাজিক গণমাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকার ভূমিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও অধিক সংখ্যক কমিউনিটি রেডিও-র লাইসেন্স দেওয়া হবে। সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত অষ্টম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়িত করা হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/লতিফ/ডিসেম্বর ২৮,২০১৩)