দশম জাতীয় নির্বাচন : আ.লীগের অঙ্গীকার ‘রূপকল্প ২০৪১’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, মধ্যম আয়ের পর্যায় পেরিয়ে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী ও উন্নত জনপদ। সুশাসন ও জনগণের ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা কোনো অপশক্তি রুখতে পারবে না।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরেকবার আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে উর্দ্বৃত্ত হবে, দারিদ্রের লজ্জা ঘুচে যাবে, শিল্পসভ্যতার ভিত্তি স্থাপিত হবে। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। রাজধানী ঢাকা যানজটমুক্ত হবে। রাজনীতি থেকে হিংসা হানাহানি দূর হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে গিয়ে যারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালাচ্ছে, তাদের বিচার করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ইশতেহারে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এই ইশতেহারে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা এবং দ্বিতীয় পদ্মা ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে সেতু দুটির কাজ শুরু করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সবার সঙ্গে বন্ধুতা, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই মূলনীতিতে পররাষ্ট্র নীতি চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর অর্থ হলো কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।
আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশের প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা এবং দারিদ্রের হার ২৬ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রী ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। নদী ভাঙন, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা জোরদার করা হবে। লবণাক্ততা রোধ করে সুন্দরবন অঞ্চলে মিঠাপানির প্রবাহ অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করো হবে। শিল্পশ্রমিকদের রেশনের সুবিধা দেওয়া হবে।
ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান সুরক্ষার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদৃঢ় করা হবে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে সংসদ সদস্যদের জবাবহিদিতা নিশ্চিত করা হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, আদালতে মামলাজট কমিয়ে স্বল্পতম সময়ে বিচার কাজ শেষ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আইনের সমান প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেও প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন।
ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্র পচিরালনায় জনগণের অধিকতর ক্ষমতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। সম্পদ ও আয়রোজগারের ব্যাপারে সর্বস্তরের নাগরিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস কঠোর হাতে দমন করার অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/জেএম/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩)