সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হচ্ছে : কর্নেল অলি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, বিগত কয়েক মাস ধরে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্ক ও মৃত্যুপুরীতে বসবাস করছে। সোনার বাংলা আজ শ্মশানে পরিণত হচ্ছে। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি আহমদ বলেন, ভয় প্রদর্শন করে মানুষের মন জয় করা সম্ভব নয়। প্রতিবন্ধকতা যত বড় তা অতিক্রম করার গৌরবও তত বড়। দেশকে রক্ষা করুন। বর্তমান প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অলি বলেন, দেশের এই অসহনীয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পন্থা হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করা। এই মুহূর্তে প্রয়োজন দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে নিজের পদ পদবির কথা চিন্তা না করে এগিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অলি আহমদ বলেন, এই মুহূর্তে দল এবং নিজের কথা চিন্তা না করে, দেশের অবস্থা অনুধাবন করুন। অনেকে আমরা স্বাধীনতার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার সম্ভাবনা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাই না। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতোপুর্বেও বহু রাজনৈতিক নেতা চূড়ান্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। আর নয়। তাবেদারকে দিয়ে আর যাই হোক না কেন, দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অপশাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করতে হবে।
কর্নেল অলি বলেন, দেশকে বাঁচাতে একদলীয় নির্বাচন বন্ধ করুন। দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অনেকে চায় না বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। এদেশে সমস্যা সৃষ্টি করে, তারা ফায়দা লুটতে চায়। রাজনীতিবিদদের অনেকেই ওই দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন নিজের ছায়ার সঙ্গে নির্বাচনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো প্রার্থী এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ সকল দলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নেই। রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। সর্বোপরি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে সরকারদ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। দেশ-বিদেশে এ ধরনের নির্বাচন কারও কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ আত্মহত্যার শামিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের তোয়াক্কা করছে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জনগণের মনে প্রশ্ন বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। এদের অনেকে ১৯৭৪ সালের রক্ষীবাহিনী ও লালবাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অলি বলেন, নির্বাচনে বিরোধী দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তাই জনমনে প্রশ্ন, এত টাকা খরচ করে সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামানোর কারণ কি? আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সশস্ত্রবাহিনীর ভয় দেখিয়ে যৌথবাহিনী দিয়ে সরকার বিরোধীদের গ্রেফতার ও নিধন করার কাজে নেমেছে। ইতোমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি বিরোধীদলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে। লক্ষাধিক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারপরও কি ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো নিশ্চয়তা আছে ? দেশের জনগণকে কষ্ট না দিয়ে অবশিষ্ট ১৪৬টি আসন নিজেদের মধ্যে মহিলা আসনের ন্যায় বণ্টন করে নিলে, নির্বাচনে আর কোনো প্রয়োজন হতো না। জাতিকে অহেতুক স্বপ্ন দেখানো বন্ধ করে, বাস্তবতায় ফিরে আসুন। নিজেদের মধ্যে আর বিভক্তি নয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩)