অবশেষে গুলিই করল মাঠ পর্যায়ের পুলিশ
কাজী জামশেদ নাজিম, দ্য রিপোর্ট : অবশেষে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রতিরোধে সরাসরি গুলি করল মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় আবুল হোটেলের সামনে রবিবার মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে অংশগ্রহণকারীদের মিছিলের ওপর গুলি করেছে পুলিশ।
এর আগে মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ১০/১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তারই প্রতিউত্তরে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে শিবিরের মানসুর প্রধানিয়া (২২) নামের এক নেতা নিহত হন। এছাড়াও পথচারীসহ মিছিলকারীদের ১০ জন আহত হওয়ার খবর পওয়া গেছে।
রাজধানীর মালিবাগ বায়তুল আজিম জামে মসজিদের সামনে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় চার পুলিশসহ ছয় জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ জনকে আটক করেছে।
মানসুর প্রধানিয়ার বন্ধু মোনোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, মানসুর আসকোনা ২নং ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক প্রধানিয়। বিমান বন্দর আসকোনা এলাকায় তাদের বাসা।
গত শনিবার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় পুলিশ। একই সঙ্গে পতাকা হাতে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির প্রতিহতের ঘোষণা দেয় সরকার। সমাবেশ প্রতিহত করার প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, এজন্য পুলিশ সরাসরি গুলির নির্দেশ চায়। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা মৌখিকভাবে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে এ দাবি করেন। গুলির নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শনিবার পুলিশ সদর দফতরে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
ডিএমপি সূত্র জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ বৈঠকটি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রতিরোধের জন্য করা হয়। দুপুর একটা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পুলিশ প্রধান আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা অংশ নেন।
শনিবার দ্য রিপোর্টে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয় :
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র প্রতিরোধের ছক
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র জন্য একটি সুক্ষ্ম ছক একেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ। তাদের সহায়তার জন্য সঙ্গে থাকবে র্যাব ও বিজিবি। ছকের মধ্যে রাজধানীর চার পাশের প্রবেশদ্বারসহ শতাধিক স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্থান দিয়ে মূলত ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবে বলে গোয়েন্দারা পুলিশকে তথ্য দিয়েছে।
স্থানগুলোর মধ্যে প্রধান ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে- বসিলা ব্রিজ, গাবতলী ব্রিজ, আশুলিয়া সংযোগ সড়কের মুখ, টঙ্গি তুরাগ নদীর ব্রিজ, আব্দুল্লাহপুর, সাইনবোর্ড মোড়, বাবুবাজার ব্রিজ ও পোস্তগোলা ব্রিজ। এর বাইরে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গুলশান- ১ ও ২ এর আশপাশ, বাড্ডা, মিরপুর, শ্যামলী, বনানী, পল্টন এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যারিকেড প্রস্তুত রাখা হবে। এসব স্থানে জরুরি নির্দেশে ব্যারিকেড দেওয়া হবে।
ব্যারিকেডের নিরাপত্তা বাহিনী সর্ম্পকে মনিরুল ইসলাম বলেন, নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তার ব্যারিকেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব স্থানে প্রথমে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। একই সঙ্গে র্যাব ও বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি রয়েছে।
কন্ট্রোল রুমে ডিএমপি কমিশনার
ডিএমপি সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা ক্ষুব্ধ। তারা সরাসরি গুলির নির্দেশ চান। এ সুযোগে অনেকেই নাটকীয় ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটাতে পারে। নেতৃত্বদানকারী ১৮ দলীয় নেতারা পুলিশের ওপর চড়াও হলেই- পুলিশ গুলি করে দাবি করতে পারে ক্রসফায়ার হয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপি কমিশনার নিজে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি গুলি করার নির্দেশ দিবেন বলেও জানা গেছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফুজ্জামান বলেন, পুলিশ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে যে কোনো ঘটনাই মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করা হবে। এ জন্য পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেখানে ডিএমপির একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে গুলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিবেন।
রাজধানীতে চলছে অঘোষিত কারফিউ
রাজধানী ঢাকায় কোটি মানুষের বসবাস। দিনের আলোতে কিংবা রাতের সোডিয়াম বাতিতে হাজার মানুষের আনাগোনায় জেগে থাকে ঢাকা। সেই রাজধানীতে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ভুতুড়ে পরিবেশ দেখা গেছে। জনশূন্য প্রতিটি সড়ক। অলিগলি কিংবা ফুটপাতেও নেই চায়ের দোকান। অদৃশ্য এক ইশারায় দোকানদাররা উধাও হয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে রাত ১০টার দিকেই রাজধানীর চিত্র দেখে মনে হয়- নগরজুড়ে চলছে অঘোষিত কারফিউ। বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় আছে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। রাস্তায় চলছে না যানবাহন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করছে ব্যাপক ধরপাকড়। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাত পৌনে ১১টায় সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি টহল দিতে দেখা যায়। একই সময় পুলিশ চেকপোস্টে সব ধরনের যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে রাজধানীতে কারফিউ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/লতিফ/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩)