‘বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিরোধী দল তার জনসম্পৃক্ততা না থাকার কারণেই কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। আজকে বিএনপির কোনো নেতাকেই রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি। এমন কী বেগম খালেদা জিয়াকেও না। বিএনপি ও খালেদা জিয়া মানুষকে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে রবিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের যে মার্চ তা নিয়ে গত কয়েক দিন কিছু পত্রিকায় এমন লেখালেখি হলো যাতে মনে হলো বাংলাদেশে কেয়ামত হবে। অথচ আজকে কিছুই হলো না। কারণ বিএনপির গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই আসেনি। এত কিছু লেখার পরও কিছু হলো না। বিএনপি এবং খালেদা জিয়া এবারও প্রমাণ করলেন তাদের কর্মসূচির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নেই। আমি আবারও বলবো, এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে কিছু প্রাণ নাশ করে দাবি আদায় করা যাবে না।
যতবার বেগম খালেদা জিয়া কর্মসূচি দিয়েছে ততবারই বাংলাদেশের মানুষ দৃঢ়ভাবে সে কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়ে বিশ্বাসী। এই দলটির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করেছেন। তারা কখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডারদের আইনজীবী সাজিয়ে সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো হয়েছে। অরাজকতার সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। শীতকালীন বেঞ্চে অংশ নেওয়ার জন্য এত আইনজীবী আসার কথা নয়। সুপ্রিমকোর্টে যারা অবস্থান নিয়েছেন তারা কেউই আইনজীবী নয়।
তিনি বলেন, কিছুদিন পর পর বেগম খালেদা জিয়া বিশাল বিশাল কর্মসূচি দেন। আগে দিলেন হরতাল, তারপর অবরোধ। হরতাল আর অবরোধের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। গণতন্ত্রের জন্য লংমার্চ। কোথায় মার্চ? আমরা কোনো মার্চ দেখি না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলের পক্ষে কোনোদিনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, শনিবার কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী একটা আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। তারা দাবি করেছেন তারা নির্দলীয়। ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিএনপির ৩জন নেতা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতেই বোঝা যায় তারা কতটুকু নিরপেক্ষ। তারা আসলে কারা? তারা এক-এগারোর মতো আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য শনিবার এই তথাকথিত নাগরিক সমাজের অনুষ্ঠান হয়েছিলো।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, তারা দাবি করলেন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিল করতে। কেন নির্বাচন বাতিল করবো? আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। গত নির্বাচন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। তাই সুপ্রিমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আমরা সংবিধান সংশোধন করতে পারি।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সংবিধানের আলোকেই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা বেশি সংখ্যক ভোট পাবে তারাই ক্ষমতায় যাবে। এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে। কোনোভাবে অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের কথা বলাকে নাটক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বেগম খালেদা জিয়ার নাটক। তার সাজ দেখে মনে হয় না তিনি আন্দোলনে যাচ্ছেন। তিনি আসলে একটা নাটক করলেন। তার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি পুলিশ এবং সরকারকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছিলেন। খালেদা জিয়া কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার জন্য সরকার বা পুলিশের কাছে কোনো আবেদন করেননি। তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলেন। এটা কোনো বিরোধীদলীয় নেতার আচরণ হতে পারে না। আমরা এর নিন্দা জানাই।
সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীদের মাঝে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে আপনি গণতন্ত্রের পক্ষে না যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে? গণতন্ত্র আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একই সূত্রে গাঁথা। আমি মনে করি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আহমদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) এবিএম তাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এপি/নূরুল/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩)