‘নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সচিবালয়ে রবিবার ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’ ও ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাধারণভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। অর্থমন্ত্রী নিজেও ইতোপূর্বে এ কথা সাংবাদিকদের বলেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে এসব বৈঠকে গৃহীত সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এটা করেছি। আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করে বিষয়বস্তু এবং সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এর ওপর।’
নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সরকার ‘খুবই সতর্ক’ রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এখন মন্ত্রিসভা কিংবা একনেক-এর কোন বৈঠক হচ্ছে না। কিন্তু সরকারকে তো চলতে হবে। এটা তো বন্ধ করলে চলবে না।
প্রসঙ্গক্রমে মুহিত আরো বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। আর এটা আমি শুরু করি নাই। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু হয়েছে। এর আগে ছিল কি-না জানি না। সুতরাং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।’
বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে কানাডা থেকে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সরাসরি এমওপি সার আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্তসহ চারটি বিষয় অনুমোদিত হয়েছে। অন্য তিনটি বিষয় হচ্ছে- কোকাকোলা কোম্পানি কর্তৃক ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধান্তে তাবানী বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তির অবসান ও সকল দায়দেনার পরিসমাপ্তি এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা রেল স্টেশনের পাশে রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে শপিংমল কাম গেস্ট হাউস নির্মাণ সংক্রান্ত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের এটাই প্রথম অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা। বিশেষত কানাডা থেকে এমওপি সার ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যই এ বৈঠকটি করতে হয়েছে। কারণ চুক্তির জন্য তারা একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন তাবানী বেভারেজের সঙ্গে কোকাকোলা কোম্পানির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল। এটির পরিসমাপ্তি হওয়ায় ভাল হয়েছে।’
ক্রয় কমিটির বৈঠকে ১৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদিত
‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে দুটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ১৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি হচ্ছে- খুলনার ৫৫ মেগাওয়াট এইচএসডিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল)। দুটিরই চুক্তির মেয়াদ ৫ বছর করে বাড়ানো হয়েছে এবং বর্ধিত সময়ের জন্য ট্যারিফ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। পুনঃনির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী খুলনার ৫৫ মেগাওয়াট এইচএসডিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নতুন ট্যারিফ হচ্ছে ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা (আগে ছিল ২১.২১ টাকা) এবং কেপিসিএল-এর ১৫ টাকা ১৩ পয়সা (আগে ছিল ১৯ পয়সা)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-০১ (পুনঃকোটেশন)-এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ক্রয়; সরকারি পর্যায়ে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান প্রোডিনটোর্গ ও বিএডিসি’র মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় দেড় লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি; চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি; নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ; ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম (কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ এস ১)-এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্পেনের প্রতিষ্ঠান ‘স্কাইটিএল (Scytl) সিকিউর ইলেকট্রনিক ভোটিং’-কে নিয়োগ; টার্ন কী ভিত্তিতে ঈশ্বরদী থেকে দর্শনা পর্যন্ত ১১টি রেল স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নে (প্যাকেজ জিডি-১; ডিজাইন, সাপ্লাই, ইন্স্টলেশন, টেস্টিং, কমিশনিং অব কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং কালার লাইট সিগন্যালিং) ঠিকাদার নিয়োগ; সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির আওতায় বিজেএমসি’র কাছ থেকে ৫০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দেড় কোটি পিস বস্তা ক্রয় ইত্যাদি।
এ সব প্রস্তাবের বিষয়ে নূরুল করিম বলেন, প্রতি টন ৩১০ ডলার হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিকটন গম আমদানিতে ব্যয় হবে ১২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর এ গম সরবরাহ করবে মেসার্স হানিফি প্রাইভেট লিমিটেড।
বিএডিসি’র মাধ্যমে রাশিয়া থেকে দেড় লাখ টন এমওপি সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৫০৪ কোটি টাকা। প্রতিটন সারের দাম পড়বে ৪২০ ডলার।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রতিটন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৮২ দশমিক ১১ ডলার। হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ড্রাগন এশিয়া ফার্টিলাইজার এই সার সরবরাহ করবে।
নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে যৌথভাবে এসজেআরএম এসোসিয়েটস এবং দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম (কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ এস ১)-এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্পেনের প্রতিষ্ঠান ‘স্কাইটিএল (Scytl) সিকিউর ইলেকট্রনিক ভোটিং’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
টার্ন কী ভিক্তিতে ঈশ্বরদী থেকে দর্শনা পর্যন্ত ১১টি রেলস্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নে (প্যাকেজ জিডি-১; ডিজাইন, সাপ্লাই, ইন্স্টলেশন, টেস্টিং, কমিশনিং অব কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং কালার লাইট সিগন্যালিং) ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালকে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
বিজেএমসি’র কাছ থেকে ৫০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দেড় কোটি পিস বস্তা ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি বস্তার দাম ধরা হয়েছে ৬৯ টাকা।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/জেএম/সাদিক/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩)