দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

কর্মসূচির নির্ধারিত দিনে রোববার পুলিশের বাধার মুখে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হতে না পারার পর নতুন এই ঘোষণা দেন বেগম জিয়া। এ সময় তাকে বেশ রাগান্বিত দেখাচ্ছিলো।

‘এ কর্মসূচি আজকে হয়নি। আবার কালকে হবে। আসেন, আপনারা আসেন, বসে থাকেন আমাদের গেইটের সামনে। প্রতিদিন আমিও আমার এ রকম কাজই করবো। কী মনে করেছেন? দেশটা কি আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে? যে গুণ্ডা বাহিনী পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের কর্মসূচি বন্ধ করবেন? সাহস থাকলে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে দেখান’- বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

এর আগে জাতীয় পতাকা হাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে চেয়ে গাড়িতে চড়লেও খালেদা জিয়াকে যেতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ঘণ্টাখানেক বাক-বিতণ্ডা চলে। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে খালেদা জিয়া নিজেই পুলিশের সাথে কথা বলেন। তবে পুলিশ তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে বাড়ির মূল ফটকটি বন্ধ করে দেয়।

এরপরই খালেদা জিয়া সোমবারও ‘গণতন্ত্রের পথে যাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে সাংবাদিকদের জানান।

তিনি আরো বলেন, ‘এ সরকার যদি দেশপ্রেমিকই হবে তাহলে সেনাবাহিনীর এতো অফিসারকে হত্যা করেছে কেন? আমরা নাকি শুধু হরতাল, অবরোধ দেই। তাহলে আজ বাস বন্ধ কেন?’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘অন্যের গোলামী করেন? দালালি করেন? আপনি কী শুরু করেছেন? দালালি করে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। ইতিহাস সে কথাই বলে। দালালি করে কোনো লাভ হবে না।’

বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘এ সরকার অবৈধ। এ সরকার থাকলে গণতন্ত্র অচিরেই বিদায় নেবে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ ধ্বংসের মুখে।’ দেশ রক্ষার যে কর্মসূচি দেওয়া হবে তাতে জনগণকে সাড়া দিতে আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

এ সময় এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই যে মহিলা আপনি এখন কথা বলছেন না কেন। এতক্ষণ তো অনেক কথা বললেন। দেশ কোথায়? গোপালি? গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলিয়ে দেব। গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।’

পুলিশকে তিরস্কার করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাজ দেশ ও মানুষ রক্ষা করা। আপনারা ঘরে ঢুকে হত্যা, ভাঙচুর করেন কেন? আপনারা কি মনে করেন, এগুলোর কোনো হিসাব হবে না? এদের আত্মীয়দের চোখের পানি কি বৃথা যাবে? আপনাদের আত্মীয়দেরও চোখের পানি ফেলতে হবে।’

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা চাকরি করেন। ভালো মতো চাকরি করবেন। আপনাদের যা দায়িত্ব তা পালন করুন। আপনাদের দায়িত্ব আমার বাসার সামনে রাস্তায় পাহারা দেওয়া। বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েছেন কেন?’

এ সময় তার পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্যরা একটু চেঁচামেচি করলে খালেদা জিয়া তাদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের মেয়েরা এতো ঝগড়া করছে কেন? চুপ করো। বেয়াদব সব। আপনাদের অফিসার কোথায় গেল? বোঝেননি? এটা তো বাংলা ভাষা। আপনাদের সেই অফিসার কোথায়, যে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল, তাকে ডাকেন। তাকে বলবেন আমার সঙ্গে যেন দেখা করে। আমি তার সঙ্গে কথা বলবো।’

এ কথা বলার পরই ফটকের ভেতরে ঢুকে যান খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার প্রটোকলের পুলিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করলেও সকাল থেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

আসন্ন নির্বাচন বাতিলের দাবিতে কয়েক দফা অবরোধের পর গত ২৪ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বেগম জিয়া। কর্মসূচি উপলক্ষ্যে রোববার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চাইলে তাতে সায় দেয়নি পুলিশ। তবে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সকাল থেকে তারা সমাবেশ শুরু করবেন এবং খালেদা জিয়া যে কোনো সময় এতে যোগ দেবেন।

এর একদিন আগে শুক্রবার খালেদা জিয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি উপস্থিত হতে না পারলেও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন।

বিরোধী জোটের ডাকা এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই দিন আগ থেকেই রাজধানী ঢাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকার সঙ্গে আশপাশের সকল জেলার বাস, লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় লাঠি হাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পাহারা দিতে দেখা যায়।

এদিকে রোববার কর্মসূচির নির্ধারিত দিনে পুলিশের সঙ্গে বিরোধী জোটের পিকেটারদের সংঘর্ষে রাজধানীতে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সুপ্রীম কোর্ট ও প্রেস ক্লাব চত্বরে ঢুকে পড়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে শিবির নেতা মানসুর প্রধানিয়া (২২) নিহত হন। এ ছাড়া রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে তল্লাশির সময় বোমা বিস্ফোরণে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাই আবুল কাশেম (২৬) নিহত হন।

এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভেতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷

এর আগে প্রেস ক্লাব থেকে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে তাদেরও বাধা দেয় পুলিশ৷ দুপুরের দিকে প্রেস ক্লাবের ভেতরে ও বাইরে সাংবাদিকদের ওপর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় প্রেস ক্লাবের মধ্যে সাংবাদিকরা দু’গ্রুপ পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক নেতা মফিজুল ইসলাম আহত হয়।

এছাড়া মালিবাগ রেলগেট এলাকা, আবুল হোটেল ও ইত্তেফাক এলাকার কয়েকটি গলি থেকে শিবির কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷

দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/সাদিক/