এম হামিদুল্লাহ খান (বীর প্রতীক)
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খান ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ১১নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনি। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার তাকে 'বীর প্রতীক' উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এম হামিদুল্লাহ খান ১৯৩৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার (সাবেক বিক্রমপুর পরগণা) মেদিনীমণ্ডলে জন্মগ্রহণ করেন। দবিরউদ্দিন খান এবং জসিমুন্নেসা খানের আট সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৫৪ সালে লৌহজং এ. টি. ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজে ব্যাচেলর অফ কমার্স কোর্সে দুই বছর পড়ার পর পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। বিমান বাহিনীর রিসালপুর একাডেমিতে ৩৪তম জিডিপিতে যোগ দিয়ে আড়াই বছর প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন প্রাপ্ত হন ১৯৬২ সালে।
১৯৭০ সালের শেষ দিকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সদর দফতরে সহকারী প্রভোস্ট মার্শাল পদে নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ভারতের বিহার চাকুলিয়ায় সর্ববৃহৎ গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রবাসী সরকারের সামরিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর উত্তর ফ্রন্টে নিযুক্ত হন- যা ছিল মেঘালয়ের তেলঢালায় মেজর জিয়াউর রহমানের কমান্ড অধীন ১১ নং সেক্টর এবং জেডফোর্সের হেড কোর্য়াটার। রে রিপোর্ট করার পর মেজর জিয়া তাকে বৃহত্তর রংপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বিপরীতে মেঘালয়ের নদীবন্দরে স্থাপিত মানকাচর প্রথম সাব সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। হামিদুল্লাহ খান ঐ ঘাঁটি থেকে রংপুরের কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তান বাহিনীর ঘাঁটিতে অভিযান পরিচালনা করেন। রৌমারি ও রাজিবপুর থানাধীন ৫৫০ বর্গমাইল মুক্ত এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে মেজর জিয়া তাকে ১১ নম্বর সেক্টরে 'সাব সেক্টর কমান্ডার' নিযুক্ত করেন। তিনি পাক সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। যুদ্ধ চলাকালে তাকে স্বোয়াড্রন লীডার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩ নভেম্বর থেকে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন। বিমান বাহিনীতে তিনি ২১ বৎসর কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে বিমানবাহিনী থেকে স্বেচ্ছা অবসরগ্রহণ করেন।
অবসরের পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। মৃত্যুকালে দলটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬- এই তিন মেয়াদে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তার লেখা দুটি বই হলো- একাত্তরে উত্তর রণাঙ্গন ও বাঙালির স্বাধীনতার পটভূমি।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও বিশেষ অবদান রাখায় তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ২০০৬ সালে ঢাকা বনানী এলাকার ২৩ নম্বর সড়কটি তার নামে নামকরণ করা হয়।
এম হামিদুল্লাহ খান ১৯৬৫ সালে রাবেয়া সুলতানা খানকে বিয়ে করেন। তাদের তিন পুত্র।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩)