হরতালে চাপা আতঙ্কে ঢাকাবাসী
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং টানা হরতালের কারণে ঢাকাবাসী চাপা আতঙ্কে ভুগছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনের বোমা হামলা, গুপ্ত হামলা, গণপরিবহনে আগুন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, গুলিতে নিহতসহ অনাকাক্ষিত ঘটনার কারণে স্বস্তিতে নেই ঢাকাবাসী। সকলের মনেই অজানা আতঙ্ক। ককটেল হামলা বৃদ্ধি ও পুলিশের উপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন স্থানে স্থাপনায় হামলার কারণে রাজধানীবাসীর এই শঙ্কা আরও বেড়েছে।
টিকাটুলির বাসিন্দা আইয়ুব আলী দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে সারাদেশে যেভাবে বোমা হামলা হচ্ছে তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি কীভাবে? এখনতো ঘরের বাইরেই বের হতে ভয় হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চারদিকে যুদ্ধ চলছে। এই পরিস্থিতিতে কখনোই ভালো থাকা যায় না।’
এদিকে, বিএনপি ও ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল চলছে। হরতালের সমর্থনে বিএনপি ও ১৮ দলের নেতা-কর্মীদেরকে রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যায়নি।
পাশাপাশি হরতাল প্রতাখ্যান করে ও হরতাল প্রতিরোধে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় খণ্ড খণ্ড মিছিল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীর নেতৃত্বে মিছিল হচ্ছে।
অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিকে ঘিরে অনাকাক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
মতিঝিল, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডি, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীর নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় হরতালের বিরুদ্ধে খণ্ড খণ্ড মিছিল হচ্ছে। মিছিলে হরতাল প্রত্যাখ্যানে শ্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘সকাল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা যোগাযোগ করছি। সবাই হরতালের বিপক্ষে। আমরা রাজপথে রয়েছি। জনগণ নৈরাজ্যের এই হরতাল মানে না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলগমীর দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘জনগণ আন্তরিকতার সঙ্গে হরতাল পালন করছে। এর মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগের নির্যাতন আর দুঃশাসনের জবাব দিচ্ছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় যানবাহন কম। প্রাইভেট কার চলছে না। সীমিত সংখ্যায় চলছে গণপারিবহন। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসও চলছে না। বড় বড় বিপনীবিতানগুলো বন্ধ ছিল। ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোও তেমন একটা খোলা পাওয়া যায়নি।
মিরপুরের বেগম রোকেয়া স্মরণীতে রবিবার সকালে কথা হয় লাকী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বড় ছেলে পায়ে আঘাত পেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছেলের জন্য খাবার দিতে তিনি ভয়ে ভয়ে বাইরে বের হয়েছেন। নতুবা এই পরিস্থিতির মধ্যে বের হতেন না।
গাবতলীতে রবিবার সকালে কথা হয় গণি মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, মামলা-মোকদ্দমার কাজে তিনি ঢাকায় এসে হরতালের ফাঁদে পড়েছেন। আজকের মধ্যে তাকে যেভাবেই হোক পাবনা যেতে হবে। এ জন্য সকাল থেকে গাবতলীতে তিনি বসে আছেন কিন্তু কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুবনা ইয়াসমীন জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি পাচ্ছেন না। স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থীর আজ একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। অবশ্য হরতালের কারণে পরীক্ষাটি পিছিয়ে গেছে।
লুবনা ইয়াসমীন বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত যেভাবে জটিল হচ্ছে তাতে সামনে যে কী হয় বুঝতে পারছি না। অজানা আতঙ্কে ভয় লাগছে।’
(দিরিপোর্ট২৪/আইজেকে/এমডি/অক্টোবর ২৭, ২০১৩)