অবশেষে প্রকল্প অনুমোদনের অনুমতি দিল ইসি
জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : অবশেষে পরিকল্পনা কমিশনকে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিকল্পনা কমিশন থেকে দুই দফা অনুরোধ পত্র পাঠানোর পর এ অনুমতি দিল সংস্থাটি। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি পত্র পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে অনুমোদিত নতুন প্রকল্প ও চলমান প্রকল্পে অর্থবরাদ্দ এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট কারিগরি প্রকল্পসমূহ এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত সংশোধিত প্রকল্পসমূহের মধ্যে থাকা প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সম্মতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম সোমবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ অনুমতির মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা জটিলতার অবসান হয়েছে। আমরা মনে করি এখন সমস্যা কেটে গেছে। শেষ সময়ে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সূত্র জানায়, এর আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ১১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খানের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-১ শাখার উপসচিব মিহর সারওয়ার মোর্শেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৩ক এর উপবিধি (১) অনুসারে নির্বাচন পূর্বসময়ে কোন সরকারি, আধা-সরকারি ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোন প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করা যাবে না।
এ জন্য শুধুমাত্র দেশের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে আইসিসি টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে গৃহীত ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড ইনফ্রাসটাকচার এন্ড বিউটিফিকেশন ওয়ার্ক এরাউন্ড মিরপুর শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম অব মেজর রোডস অব ঢাকা সিটি ফর আইসিসি ওয়াল্ডকাপ টি-২০ বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মতি রয়েছে।
তবে নৈমিত্তিক অর্থছাড় ও অন্যান্য জরুরি বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রকল্পের কোন জরুরি প্রয়োজনে প্রকল্পভিত্তিক প্রস্তাব কমিশনের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা যেতে পারে।
এ চিঠি পাওয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিতীয়বার আবারও অনুরোধপত্র পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। শেষ পর্যন্ত অনুরোধে সাড়া দিয়ে অর্থবরাদ্দ ও প্রকল্প অনুমোদনের সম্মতি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণে সময় মতো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন না হওয়ায় বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিশ্রুত অর্থ অন্যদেশে চলে যাওয়ার আশংকা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে যেসব প্রকল্প জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কিন্তু জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেসব প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় পরিকল্পনা কমিশন।
২৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিধি অনুযায়ী ২৫ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একনেক বৈঠক বাতিল করা হয়। কিন্তু বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্ত কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, যা সরাসরি নির্বাচনে প্রভাব পড়ে এমন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় সেসব বৈদেশিক চুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অনুমোদন হওয়া প্রয়োজন। সকল কারিগরি সহায়তা প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রী অনুমোদন করে থাকেন, এ জন্য একনেক বৈঠকের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া চলমান প্রকল্পের সংশোধনীর ক্ষেত্রে (যা প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে সংশোধন জরুরি) যেমন যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেসব প্রকল্পের সুষ্ঠ সমাপ্তির জন্য অনুমোদন দরকার। এ ক্ষেত্রেও যেসব প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি অনধিক ২০ শতাংশ অথবা মোট সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় ২৫ শতাংশের নিচে সেসব প্রকল্প জনস্বার্থে অনুমোদন হওয়া প্রয়োজন।
এ অবস্থায় ওই চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন করা যাবে কিনা সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মতামত বা ব্যাখা চাওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খানের পাঠানো একটি চিঠির অনুলিপিও পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, দেশের ভাবমূতি রক্ষা, বহিঃবিশ্বে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে তিনটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন প্রয়োজন।
প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছিল, এলজিইডির বাস্তবায়িতব্য মিউনিসিপাল গভর্ন্যান্স সার্ভিসেস প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশ অনুযায়ী পুনর্গঠন করে ১৩ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫১৭ কোটি ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও বড় অংকের ঋণ রয়েছে। ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইতোমধ্যেই নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি যথাসময়ে অনুমোদন না হওয়ায় বাংলাদেশ যথাসময়ে প্রকল্প সাহায্য হতে বঞ্চিত হতে পারে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়িতব্য ইমপ্রুভমেন্ট অফ রোড ইনফ্রাসটাকচার এন্ড বিউটিফিকেশন ওয়ার্কস এরাউন্ড মিরপুর শেরইবাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম এন্ড মেজর রোডস অফ ঢাকা সিটি ফর আইসিসি ওয়াল্ডকাপ টি-২০ বাংলাদেশ ২০১৪ নামের প্রকল্পটি গত ২৫ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে আইসিসি ওয়াল্ডকাপ টি-টুয়েন্টি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পটি জানুয়ারির মধ্যেই অনুমোদন প্রয়োজন। প্রকল্প সময় মতো শুরু করতে না পারলে ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। এ ছাড়া ডিপিএইচই এর বাস্তবায়নাধীন বিশেষ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি ১১ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। গ্রামীণ জনগণের সুপেয় পানি সরবরাহের মাধ্যমে সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ প্রকল্পের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এটির সংশোধিত প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদন প্রয়োজন।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএআর/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩)