আল হেলাল শুভ ও শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : বিরোধী জোটের ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে শনিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসতে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে লঞ্চগুলোকে। অনেক স্থানে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও ঢাকায় লঞ্চ আসতে বাধা দিয়েছেন। দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এমভি জাহিদ-৩ লঞ্চের মাস্টার মোহাম্মদ শাহীন মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে যখন যাত্রী নিয়ে রওনা দেই, তখন পুলিশ লঞ্চ নিয়ে ঢাকায় আসতে দেয়নি। কোনো উপায় না দেখে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি লঞ্চ নিয়ে ঢাকায় আসতে হয়েছে।’

ওই লঞ্চের সারেং জলিল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসতে দেয়নি। ঘাটে ঘাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে উপস্থিত ছিল। এ কারণে আমরা নির্ধারিত ঘাটে লঞ্চ ভিড়াতে না পেরে সরাসরি ঢাকায় চলে আসি।’

এমভি সাদিম লঞ্চের মাস্টার সহকারী মোহাম্মদ কাসেম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গত শনিবার বিকেলে ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দিয়ে বলে, যাত্রীসহ লঞ্চ ঢাকায় যেতে পারবে না। আমরা বলি, লঞ্চের ইঞ্জিনের কাজ আছে তাই এখনই ঢাকায় যেতে হবে। পুলিশ বলে, যেতে হলে যাত্রীদের নামিয়ে খালি লঞ্চ নিয়ে যেতে হবে। পরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি লঞ্চ নিয়ে ঢাকার পৌছাই।’

এমভি বাগেরহাট-১ লঞ্চের মাস্টার আব্দুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যাত্রীসহ রওনা হলে পুলিশ আমাদের লঞ্চ আটকে দেয়। পরে আমরা আবার ঘাটে ফিরে সকল যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু আমাদের লঞ্চে পুলিশের এক ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) তার পরিবারসহ উঠেছিলেন। ওসির বাবা মারা যাওয়ায় তিনি পরিবারসহ আমাদের লঞ্চে ঢাকা রওনা হন। আসার সময় মুন্সিগঞ্জের দুই স্থানে, ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ আমাদের লঞ্চ আটকে দেয়। কিন্তু ওসি ঐ এলাকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেন।’

এমভি বাগেরহাট-১ লঞ্চে ঢাকায় আসা যাত্রী হিরণ শিকদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লায় পুলিশ আমাদের লঞ্চকে আসতে বাধা দেয়। তবে লঞ্চে যাত্রী হিসেবে একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকায় শেষ পর্যন্ত আমরা ঢাকায় আসতে সক্ষম হই।’

ময়ূর-২ লঞ্চের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা গত শনিবার ঢাকায় আসি। এরপর আমাদের লঞ্চ সদরঘাটে ভিড়তে দেওয়া হয়নি। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে জাহাজের ডকইয়ার্ডে লঞ্চ ভিড়িয়ে রাখি। বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা সোমবার সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার অনুমতি দিয়েছেন।’

বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সোমবার থেকে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করছে। পুলিশ কোনো প্রকার বাধা দিচ্ছে না।’

দুইদিন লঞ্চ না চালাতে পুলিশি বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কেন বাধা দিবে? পুলিশ টার্মিনালের নিরাপত্তা দেখেছে। লঞ্চ চলাচলের বিষয় নির্ভর করে মালিকের ওপর। তারা চায়নি তাই লঞ্চ চলেনি।’

এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সদরঘাট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার খোঁজ করা হলে সংবাদমাধ্যমের কর্মী জানার পর ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি তো সাংবাদিক। কি কারণে লঞ্চ বন্ধ ছিল তা জানেন না? এখানে কেউ আপনাকে আসল কারণ বলবে না। সবাই বলবে উপরের নির্দেশেই বন্ধ ছিল।’

দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদক তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তার পরিচয়পত্রটি পকেটে ঢুকিয়ে বলেন, ‘আমার পরিচয় জানা লাগবে না।’

লঞ্চ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে কোনো বিধিনিষেধ ছিল কি-না জানতে চাইলে সদরঘাটের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. সাইফুল হক খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কি-না তা আমরা জানি না।’

(দ্য রিপোর্ট/এসআর-এএইচএস/জেএম/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩)