সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সাংবাদিক সমাজের নেতৃবৃন্দ দুটি রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত হয়ে খোদ জাতীয় প্রেস ক্লাবে যখন যার যার অবস্থান থেকে গলা ফাটাচ্ছেন সেই সময়ে খবরের কাগজ, রেডিও-টিভি, অনলাইন পত্রিকার তরুণ পেশাদার সাংবাদিকরা জীবন বাজি রেখে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। গত ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে প্রশাসনের কড়া পাহারা এড়িয়ে কিছু সাংবাদিক ঢুকেছিলেন বলেই জাতি জানতে পেরেছিল বিরোধীদলীয় নেত্রীর সেদিনের বক্তব্য। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টে যখন পুলিশ জলকামান দিয়ে বিরোধী মতবাদের আইনজীবীদের প্রতিহত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল সে দৃশ্য যেমন গণমাধ্যমে এসেছে তেমনি এসেছে সরকার দলীয় সমর্থকদের সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকে সরকারবিরোধী আইনজীবীদের ওপর বেপরোয়া হামলার দৃশ্য। রাজনীতির এক আপাততঃ অসমাধানযোগ্য সন্ধিক্ষণে মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তা প্রতিমুহূর্তে দেশবাসী দেখছেন। নেতৃত্ব বিভক্ত হলেও দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা দল-মতের উর্ধ্বে উঠেই কাজ করছেন।

রাজনৈতিক প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত বিভক্ত হয়ে পড়লেও মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা জীবন বাজি রেখে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছেন বলেই শত চেষ্টা করেও সত্যকে লুকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। বিপরীত দিকে সরকারবিরোধী পক্ষ আন্দোলন-সংগ্রামের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করলে সেটিও সাহসের সহিত তুলে ধরছেন মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশের ভবিষ্যত কী- তা বোঝার জন্য জনগণের কাছে এখন মিডিয়া-ই একমাত্র ভরসা।

আমরা মনে করি নানান কারণে আজ যে সত্য প্রকাশ হতে পারছে না, আগামিতে তা জাতিকে সাংবাদিকরাই জানাবে। নেতৃত্ব পর্যায়ে দলবাজি, সুবিধাভোগী শ্রেণী থাকলেও সম্প্রদায়গতভাবে সাংবাদিকরা সত্যকে ধারণ করে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাময়িকভাবে কোনো পক্ষ মনক্ষুণ্ন হলেও আখেরে তা সকলের জন্যই ভালো বলে গণ্য হবে। গত কয়েকদিনে অনেক সাংবাদিকই শারীরিকভাবে নিঃগৃহীত হয়েছেন, অপমান-অপদস্থ হয়েছেন। সাংবাদিক নেতৃত্বের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে তার তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবাদ হোক বা না হোক, যারা সত্যের জন্য কাজ করছেন সেই সাংবাদিকরা তাদের ব্রত থেকে বিচ্যুত হবেন না।