দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র দ্বিতীয় দিন সোমবারও মাঠে নামেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা।

‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র নির্ধারিত দিন ছিল রবিবার। কিন্তু বিরোধী দলের এ কর্মসূচি ঠেকাতে সরকার ঢাকাকে শনিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ ছাড়া ঢাকায় কর্মসূচি যাতে না করতে পারে সে কারণে নয়াপল্টনসহ কার্যত এর আশপাশের এলাকাকে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় দুদিন আগে থেকেই।

মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি সফলে নেতাকর্মীরা মাঠে নামেনি এমন অভিযোগ মানতে নারাজ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। তিনি বলেন, মাঠে নামার কোনো বিষয় নয়। সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে। শুধু বাধাই নয়, আমাদের নেতাকর্মীদের দেখামাত্রই পুলিশ গুলি করছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার নিজেদের রক্ষা করতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আজম আরও বলেন, আমরা তো সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইনি। সংবিধানসম্মত ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছি। অথচ এই স্বৈরাচারী সরকার জনরোষের ভয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছেন। সরকার বাধা না দিলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো ঢাকা শহর বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের পদভারে প্রকম্পিত হবে।

এদিকে, ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রার দ্বিতীয়দিন সোমবারও পুরো নয়াপল্টনই ছিল জোটের নেতাকর্মীশূন্য। পুরো এলাকা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দখলে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের লোহার কলাপসিবল গেটে ঝুলেছে তালা। সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জোটের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি সেখানে। কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে ঢুকতে বা বের হতেও দেখা যায়নি।

কার্যালয়ের সামনে ঢাকামুখী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। অনুষ্ঠানের জন্য বসানো হয়নি কোনো মঞ্চ বা লাগানো হয়নি মাইকও।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যালয়ের আশপাশে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন ছিল জলকামান ও প্রিজনভ্যান।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে সড়কের দুই প্রান্তে বসানো হয়েছিল পুলিশি ব্যারিকেড। নয়াপল্টনে ঢোকার সব পথে মোতায়েন ছিল পুলিশ। এমনকি আশপাশের সব গলিতেও ব্যারিকেড দেয়ার পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ। এলাকার সব দোকানপাট ছিল বন্ধ।

সাধারণ মানুষ এসব এলাকা দিয়ে হেঁটে পার হতে পারলেও সবাইকে তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয়। কাউকে কোনো স্থানে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়ি নিয়ে বা পায়ে হেঁটে গণমাধ্যম কর্মীদের ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন, নয়াপল্টনের কাছাকাছি এলাকায় দ্বিতীয় দিনও নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছেন। পুলিশি বাধার কারণে তারা সমাবেশস্থলে যেতে পারছেন না।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পর পুলিশ গ্রেফতার করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৫ জানুয়ারির ভোট রুখতে রবিবার ঢাকামুখী অভিযাত্রার পর নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে সমাবেশের কার্যক্রম শুরুর কথাও বলেছিলেন দলটির নেতারা।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এনআই/জেএম/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩)