আতঙ্ক ও ভয়ের শহর ঢাকা
মাহফুজ স্বপন : এ কেমন ঢাকা! যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক ও ভয়ের শহরে পরিণত হয়েছে ঢাকা শহর। একা পথ চলতে গা ছম ছম করে উঠে। একটা গুমোট ভাব। মনে হয় এখনই কোনো কিছু গ্রাস করবে। ভয়ে ভয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই হাতের ইশারায় থামতে হলো। পড়তে হলো পুলিশি জেরার মুখে। জেরার সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি চালানো হচ্ছে সারা গায়ে। তন্ন তন্ন করে দেখার পর পার পাওয়া গেল। এ যেন মগের মুল্লুক। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পথ চলাই দায়। মনে হচ্ছে ঢাকাকে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছে বর্তমান সরকার। এটা চলতে পারে না। ভূক্তভোগীদের কয়েকজন এমনই বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
এক পথচারী আব্দুর রহমান, উত্তরায় থাকেন। ছোট ব্যবসা করেন বিমানবন্দর এলাকায়। রোজকার মতো আজও এসেছিলেন দোকান খোলা যায় কি-না দেখতে। কিন্তু না। দোকান করার কোনো অবস্থা নেই। একটা গুমোটভাব। কোনো দোকান করতে দেওয়া হচ্ছে না। অগত্য কী আর করা। বাসায় ফিরতে যেয়ে পথে পথে পুলিশি হয়রানি। কার কাছে প্রতিকার চাইব? আমাদের বেঁচে থাকার উপায়টুকুও নেই। ক্ষমতা দখলে রাখা আর ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে চলছে লড়াই। আর এ আগুনে পুড়ে ছাই হতে হয় আমাদের মতো মানুষদের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা চলতে পারে না।
বিমানবন্দর রেলস্টেশন। বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে অপেক্ষা করছেন কিছু যাত্রী। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়। এর মধ্যে সোহরাব হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, গত শুক্রবার জামালপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে রোগী দেখতে এসেছিলেন। এখানে এসেছিলেন ট্রেনে করে নিজ গন্তব্যে যাবেন। কিন্তু ট্রেন নেই। এভাবেই প্রায় বিভিন্ন স্থান থেকে কাজ শেষে জামালপুর যাওয়ার জন্য ২৫ জন একত্র হলেন। সবাই মিলে একটি পিকআপ ভাড়া করেন ৫ হাজার টাকায়। প্রতিজনকে ভাড়া দিতে হবে ২শ টাকা করে। তাদের বক্তব্য এ কোন ঢাকা, এ যেন এক মূর্তিমান আতঙ্কের ও ভয়ের নগর।
খুলনাগামী যাত্রী আমেনা আক্তার। তিনদিন হলো অপেক্ষা করছেন খুলনা যাবেন। কিন্তু অপেক্ষার পালা আজও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও জানেন না তিনি। অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। স্টেশনের কোনো কর্মকর্তাই কোরো কথার জবাব দিতে পারছেন না। কারও কাছে কোনো জবাব মিলছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা চলতে পারে না। দুই নেত্রীর জেদাজেদিও বলি হচ্ছি আমরা। আমারা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
ফজলুর রহমান। গন্তব্য সিলেট। তার সঙ্গে স্ত্রী ও এক বোন। তার সঙ্গে আলাপ করতে চাইলেই প্রথমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে কী হবে? তিনি আক্ষেপ করে বলেন এ কোন দেশে আমরা বসবাস করছি? তারপরও তাকে প্রশ্ন করলে তিনি রাগতস্বরেই বলেন, গতকাল কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলাম সিলেট যাব বলে। কিন্তু ট্রেন তো দূরের কথা। টিকিট কাউন্টারের কাছে অপেক্ষা করছিলাম যদি কোনো ট্রেন আসে। কিন্তু না। এর বদলে স্টেশনের নিরাপত্তার নামে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের পিটিয়ে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। পথের ধারেই রাত কাটিয়ে শেষমেষ এসেছি বিমানবন্দর স্টেশনে। কিস্তু ট্রেন আজও আসবে কি-না তা জানা সম্ভব হয়নি। কবে ট্রেন চলবে, না-কি চলবে না কেউই বলছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশনে অবস্থানকারী এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদেরও জানা নেই কখন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএস/জেএম/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩)