দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিজ জীবনের শেষ বিচার কার্যদিবসে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায় নিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির।

তিনি বলেন, ‘আজ আমার কর্মজীবনের শেষ দিন। আপনারা আমাকে যে সংবর্ধনা দিয়েছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ।’

ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসে মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলসহ শতাধিক আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সামনে বিদায়ী বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিচারপতি বলেন, বিচারপতিদের বিদায়ী অনুষ্ঠান খুব কমই হয়। আমি জীবনে ৪০ বছর বিচার কাজ করেছি। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদায়কালে কোনো কোনো জায়গায় আইনজীবীরা আমাকে ডিনারের দাওয়াত করতেন। আবার কোনো কোনো জায়গায় বদলি হবার খবর জানার পর কেউ দেখা করতেও আসতেন না। এটা জীবনের অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আমাকে ফোন করে বলেন, আমাদের দেশে নতুন একটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে। সেখানে আপনাকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। আপনি কি সম্মতি দিচ্ছেন। আমি বললাম হ্যা, আমি করবো। এটা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তির প্রথম দেড় বছর শুধু যাওয়া আর আসা। কোনো কাজ ছিল না। তখন ভাবতাম আমি বেতন পাই কেন? কোন কাজ তো করছি না। শুধু ট্রাইব্যুনালে আসি আর যাই। এরপর ২০১২ সালে কয়েকটি মামলা পেলাম বিচার করার জন্য।

এটিএম ফজলে কবির বলেন, প্রথমদিকে একটা হতাশা কাজ করতো যে, সঠিক বিচার করতে পারছি কিনা। দেশ ও মানুষকে কি উত্তর দিবো?

আমার পরিবারের সদস্যরা এবং সহকর্মীদের বেশিরভাগই ট্রাইব্যুনালে কাজ করার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলেন। তবে অনেকে আবার অনুপ্রেরণাও দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আজ যাওয়ার সময় আমি খুব তৃপ্ত। যতটুকু পেরেছি আমি বিচার করেছি।বিচার তো কেউ শেষ করতে পারবে না। এটা তো চলমান বিষয়। আমি চলে যাওয়ার পর যে আসবে সে করবে। আমার বয়স ৬৭ বছর হয়ে গেছে। মহান আল্লাহর কাছে আমি দীর্ঘজীবন চাই না, শুধু সুস্থতা আশা করি।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, আদালতকে আপনারা যেভাবে সাহায্য করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, জাতির জন্য সবসময় তা করবেন।

ব্যক্তিগত জীবনে চলাফেরা, কাজে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তা হলে ক্ষমা করে দিবেন- সহকর্মী ও উপস্থিত সবার প্রতি এ অনুরোধ জানান তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে মঙ্গলবার বিচাপতি এটিএম ফজলে কবিরের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাই তাকে বিদায় জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সরকারপন্থী আইনজীবীরা দুপুরে এই বিদায়ী সংবর্ধনা দেন।

সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদের আহবায়ক বাসেত মজুমদার বিচারপতির জীবনের একাডেমিক ও কর্মজীবনের বিভিন্ন কৃতিত্ব তুলে ধরে তাকে ধন্যবাদ জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মো. মাজহারুল ইসলাম (মৃত) ও মোসাম্মাত তাইবাতুন নেসার (মৃত) পুত্র বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ১ জানুয়ারি ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

একাডেমিকভাবে তিনি বিএ ও আইন বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৭৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে অনুশীলন শুরু করেন।

১৯৭৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে মুনসিফ (সহকারী জজ) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। অতঃপর ১৯৯২ সালের ২২ অক্টোবর তিনি জেলা ও সেশন জাজ হিসেবে উন্নীত হন। বিচারিক জীবনে তিনি সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, খুলনা ও ঢাকা জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দীর্ঘ ১১ বছর জেলা জাজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়মানুযায়ী এর দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ আগস্ট হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। বিচারিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন হলে এটিএম ফজলে কবিরকে সেখানকার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অতঃপর ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক পদত্যাগ করার পর ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এমএআর/৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩)