দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সেই প্রাচীনকাল থেকেই পর্যটকদের জন্য সরাইখানা কিংবা হোটেল খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুই হাজার বছর আগে ইউরোপে রোমানরাই প্রথম হোটেল চালু করেছিল বলে ধারণা করা হয়। যদিও ইউরোপের কোনো প্রাচীন হোটেলই আজ আর টিকে নেই। তবে কালের সাক্ষী হয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাতে আজো প্রস্তুত ১৩শ’ বছর আগে নির্মিত জাপানের হোশি রিয়োকান।

৭১৭ সালে শুরু হয়েছিল হোশি রিয়োকানের পথচলা, যা অব্যাহত আছে আজ অবধি। হোশি রিয়োকানের গল্প শুরু হয় জাপানের ইতিহাসে বৌদ্ধবাদের অন্যতম শিক্ষক তাইচো দাইশির হাত ধরে। তাইচো একবার হাকুসান পাহাড়ে গিয়েছিলেন ধর্মীয় চর্চার জন্য। একরাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে এক অলৌকিক ব্যক্তি তাকে ওই পাহাড় থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে আওয়াজু গ্রামে একটি অলৌলিক ভূগর্ভস্থ জলপ্রপাতের কথা বলেন। ওই ব্যক্তি স্বপ্নে তাইচোকে জলপ্রপাতের কাছে যাওয়ার পথ বাতলে দেন। একইসঙ্গে ওই জলপ্রপাতের পানি থেকে গ্রামবাসীর রোগমুক্তি ঘটবে বলেও জানান তিনি।

স্বপ্নে দেখা ওই ব্যক্তির কথা মতো জলপ্রপাত খুঁজে পান তাইচো। জলপ্রপাতের পানি দিয়ে গ্রামবাসীকে গোসল করার ও পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। জাদুকরী ওই পানির প্রভাবে রোগ মুক্তি ঘটে তাদের। এ খবর সঙ্গে সঙ্গে চাউর হয়ে যায়। রোগমুক্তির আশায় সেখানে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। এসব মানুষের সুবিধার জন্য তাইচো তার শিষ্য গারয়ো হোশিকে সেখানে একটি হোটেল তৈরির নির্দেশ দেন।

১৩শ’ বছর পর আজ ৪৬ প্রজন্ম ধরে হোশি পরিবারই হোটেলটি পরিচালনা করছে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন হোটেলের পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন প্রতিষ্ঠানও এটি। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিধিও বেড়েছে হোটেলটির। বর্তমানে হোটেলটির একশ’টি কক্ষে সাড়ে চারশ’ মানুষ থাকতে পারে।

জাপানে চার ঋতু। এই ঋতুগুলোর নামেই হোটেলটির চারটি ভবনের নাম রাখা হয়েছে। হোটেলটির প্রত্যেকটি কক্ষেরও আলাদা আলাদা নাম আছে।

আর এতো বছর পর আজো টিকে আছে হোটেলটির ভেতরের ওই জলপ্রপাতটি।

মনোরম পরিবেশে অবস্থিত হওয়ায় ও বিশ্বমানের সেবা দেওয়ায় হোটেলটি আজো জাপানের শীর্ষ পর্যায়ের হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম।

(দ্য রিপোর্ট/কেএন/এমডি/রা/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩)