ডিএসইর এক বছর
সফলতার পাল্লায় যোগ হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সফলতার প্যারামিটারে আগের বছরের সমান্তরালে থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগের পরিসংখ্যান দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) একধাপ এগিয়ে রেখেছে। মোট ১৬টি মানদন্ডের মধ্যে গত বছর ৮টিতে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে ডিএসই। তবে বাকি ৮টিতেও তেমন পিছিয়ে নেই প্রধান পুঁজিবাজার।
এক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালের তুলনায় ডিএসইতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। গত বছর ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে কিনেছেন ২ হাজার ৬৫২ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট এবং বিক্রি করেছেন ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। অর্থাৎ গত বছর ডিএসইতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের লেনদেন ছিল ৩.৫৩ শতাংশ। আগের বছর যা ছিল ১.৯০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ রয়েছে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বছর শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট বা ৪.৩০ শতাংশ। গত ২৮ জানুয়ারি’১৩ তারিখে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ছিল ৪০৯০ পয়েন্ট এবং ৩০ ডিসেম্বরে ছিল ৪২৬৬ পয়েন্ট। এর মধ্যে ২০ নভেম্বর তারিখে সূচক সর্বোচ্চ ৪৪৩৯ পয়েন্ট এবং ৩০ এপ্রিল সর্বনিম্ন ৩৪৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করে।
তবে কমেছে ডিএস-৩০ ইনডেক্স। গত ২৮ জানুয়ারি ডিএস-৩০ ইনডেক্স ছিল ১৪৭৩ পয়েন্ট এবং ৩০ ডিসেম্বর ছিল ১৪৬৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ বছর শেষে ডিএস-৩০ ইনডেক্স কমেছে ৭ পয়েন্ট বা ০.৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে গত ১৬ জুলাই ডিএস-৩০ সূচক সর্বোচ্চ ১৬৫৪ পয়েন্টে এবং ২৯ এপ্রিল সর্বনিম্ন ১২৮২ পয়েন্টে অবস্থান করে।
বছর শেষে বাজার মূলধন বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। গত ১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ৩৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৯ কোটি ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২০১৩ সালে বাজার মূলধন বেড়েছে ২৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
টাকার অংকে গত বছর ডিএসইতে আগের বছরের চেয়ে লেনদেন কমেছে। আগের বছর ডিএসতে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ১০৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর গত বছর লেনদেন হয়েছিল ৯৫ হাজার ২৭৪ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আগের বছর ডিএসইতে দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪২০ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং গত বছর দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪০০ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
গত ৯ জুলাই ডিএসইতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুায়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছিল। আর ২১ জানুয়ারি সর্বনিম্ন ১০১ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
শেয়ারের হাতবদলও বেড়েছে গত বছর। আগের বছর ডিএসইতে মোট ২ হাজার ১৬৮ কোটি ৯০ লাখ শেয়ার লেনদেন হলেও গত বছর হয়েছে ২ হাজার ২৯৮ কোটি ৯০ লাখ।
আগের বছরের ন্যায় গত বছরও ডিএসইতে ২৩৮ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। বেড়েছে কোম্পানিগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার পরিমাণ। আগের বছর ডিএসইতে মোট ২৪০টি কোম্পানি এজিএম করলেও গত বছর এজিএম করেছে ২৫৩টি কোম্পানি।
গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১৪টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। আগের বছর ১১৬টি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দিলেও গত বছর দিয়েছে ১২৮টি। তবে গত বছর বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা কম লক্ষ্য করা গেছে। আগের বছর ডিএসইতে ১৬৫টি কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দিলেও গত বছর দিয়েছে ১৫৩টি। রাইট শেয়ার দেওয়ার হারও কমেছে গত বছর। ২০১২ সালে মোট ১৫টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ছাড়লেও গত বছর ৮টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করেছে।
তবে গত বছর বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে ২২টি কোম্পানি। আর আগের বছর ১৭টি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) পরিসংখ্যাণেও গত বছর পিছিয়ে ছিল আগের বছরের তুলনায়। মোট ১৭টি কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া ২০১২ সালে সম্পন্ন হলেও গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।
আইপিওর মাধ্যমে ২০১২ সালে ডিএসইতে ১৮১ কোটি ৭৫ লাখ ১৫ হাজার ৫১২টি শেয়ার যোগ হয়েছে। আর গত বছর ১৬৬ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯টি শেয়ার যোগ হয়েছে।
আইপিওর মাধ্যমে গত বছর ডিএসইতে যোগ হয়েছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মূলধন। আগের বছর যা ছিল ১ হাজার ৫৫৬ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ২০১২ সালে ৮২ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের পরিমান তুলনামুলক বেড়েছে।
গত বছর ডিএসইতে বোনাস শেয়ার যোগ হয়েছে ৩১৪ কোটি ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫০২টি। আগের বছর যোগ হয়েছিল ৪৭১ কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার ৮০৭টি শেয়ার। রাইট ইস্যুর মাধ্যমে গত বছর ডিএসইতে শেয়ার যোগ হয়েছে ১৮ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৫৩টি। আগের বছর যোগ হয়েছিল ৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৩৬টি শেয়ার।
সব মিলিয়ে গত বছর ডিএসইতে মোট ৪৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৪টি শেয়ার যোগ হয়েছে। আগের বছর যা ছিল ৭০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৫৫টি।
আগের বছর ডিএসইতে শতভাগের উপর লভ্যাংশ দিয়েছে ৭টি কোম্পানি এবং গত বছর দিয়েছে ৯টি। গত বছর ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়েছে ৩টি কোম্পানি আর আগের বছর দিয়েছে ৪টি কোম্পানি। এছাড়া ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়েছে ১৬টি কোম্পানি। আগের বছর একই পরিমান লভ্যাংশ দিয়েছে ১২টি কোম্পানি। এ ছাড়া গত বছর ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০টি কোম্পানি। আগের বছর যা ছিল ১৯টি।
(দ্য রিপোর্ট/এইচকে/ডিসেম্বর ২০১৩)