দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বলা যায় দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে তারা। ঘরোয়া বিজয় দিবস টোয়েন্টি২০ আসরে তাই তাদের খেলার ওপর নজরদারী ছিল। সেখানে ফাইনালের বাইরেও ব্যক্তিগত লড়াইয়ে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসান। মঙ্গলবার শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই লড়াইয়ে জিতেছেন সাকিব। শুধু তারাই নয়; এই আসর থেকে আলোর বাতিঘর খুঁজতেই ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন আয়োজন করেছে বিসিবি। লক্ষ্য টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুত থাকা; ভুল শুধরে নেয়ার মহড়া। সব মিলিয়ে টোয়েন্টি২০ সেরা দল নির্বাচন করা।

৫৫ রানের একপেশে ফাইনাল ম্যাচ হারের পর তামিম ইকবাল কথা বলেছেন ব্যাকফুটে থেকে। সঙ্গে জরিমানা গণা তামিম বিক্ষুব্ধ ছিলেন ফাইনাল নিয়ে। বলেছেন তার হতাশা-আক্ষেপের কথাও।

তামিম ইকবাল নিজের আউট নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ। মাঠেও তা প্রকাশ করেছেন। রীতিশুদ্ধ না হওয়ার ম্যাচ শেষে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও গুণতে হয়েছে। তামিম আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের দলের অনেক কিছু নির্ভর করে আমার ওপর। কিন্তু আমার বিপক্ষে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা আমি জীবনে কোনদিন দেখিওনি, শুনিওনি। শুনবও না আমার মনে হয়। ওটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমার ওপর দল অনেকটা নির্ভর করে থাকে। আমি যদি একটা ভালো শুরু দিতে পারতাম ১৭৫ চেজ করার সময়। ওই জায়গায় ছন্দটা নষ্ট হয়েছে।’

প্রাইম ব্যাংকের ইনিংস সর্ম্পকে বলেছেন, ‘ওরা যেভাবে শুরু করেছিল, একটা সময় আমার তো মনে হয়েছিল যে ওদের ২০০ রান হবে। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে আমাদের বোলাররা খুবই চমৎকার বোলিং করেছে। ব্যাটিংয়ের সময় আমরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় ওই রান তাড়া করাটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।’

নিজের আউট সর্ম্পকে তামিম বলেছেন, ‘আমি জানি না; আমাকে ক্যাচ আউট দিয়েছে। রিপ্লেতে ভালোভাবে দেখলে দেখবেন যে পূর্বে ছিল আমার ব্যাট; আর পশ্চিমে ছিল আমার প্যাড (হাসি...)। ডিফারেন্স এতটাই ছিল...। যাই হোক আমার কোন অভিযোগ নেই। কারণ আম্পায়ারও মানুষ। তারও ভুল হতে পারে। কিন্তু খারাপ লাগছে যে ওদের সঙ্গে ২ বারই আমাকে ভুল আউট দেওয়া হল। আমি জানি না কেন?’

সার্বিকভাবে টুর্নামেন্টটা কেমন হয়েছে; সে ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এ টুর্নামেন্টটা সবসময় থাকা উচিত। এমন নয় যে এবার করে পরেরবার আর করা হবে না। বিপিএলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ টুর্নামেন্টে পুরোটাই নির্ভর করে স্থানীয়দের ওপর। স্থানীয়রাই ম্যাচ জেতাবে, ওরাই একটা কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে বের করে নেবে। ফোকাসটা হল স্থানীয়দের ওপর। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ ধরনের পরিস্থিতি হলে ওদের একটা ধারণা থাকবে। বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য এ টুর্নামেন্টটাকে তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে।’

এই আসর থেকে নিজে কী পেলেন, সেই ব্যাখ্যায় তামিম বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, এই টুর্নামেন্টের আগে এক মাস আমি ব্যাটই ধরিনি। আমি জানতাম যে ছন্দটা ফিরে পেতে এক-দুটো ম্যাচ সময় লাগবে। আল্লাহর রহমতে শেষের দিকে আমি আমার মতো ব্যাটিং করতে পেরেছি।’

তিনি আরো যোগ করেছেন, ‘বিপিএলও আমরা উপভোগ করি। তবে এ টুর্নামেন্টটা আমাদের ক্রিকেটাররা খুব উপভোগ করেছে বলে আমার মনে হয়। খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে। কাগজ-কলমে দেখলে আমার দলটা কিন্তু সেরা দল ছিল না। আমি নিজেও কোনসময় চিন্তা করিনি যে আমরা ফাইনাল খেলব। একটা ম্যাচ জেতার পর ভেবেছিলাম, যাক একটা ম্যাচ তো জিতলাম। এই যে আত্মবিশ্বাস, সেজন্যই ফাইনাল খেলেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় এ বিশ্বাসটাই সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়।’

তামিমের মুখ থেকে ঘুরে ফিরে এসেছে সিলেট ভেন্যুর কথা। বলেছেন, ‘সিলেট পর্বটা তো ছিল দুর্দান্ত। রুম্মনের উদাহরণ দিয়েই বলি। ও ২০-২৫ হাজার দর্শকের সামনে খেলেছে। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে এত দর্শক কিন্তু হয় না। সিলেটে এটা হয়েছে। আর দর্শকের চাপ কিন্তু বিরাট চাপ। এই চাপে ভালো খেলাটা খুব বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের হয়ে যখন খেলবে, এই অভিজ্ঞতা তখন কাজে লাগবে। সেই দিক থেকে এ টুর্নামেন্টটাকে আমি প্রিমিয়ার লিগের কাতারেই রাখব। বিসিবিকে অনুরোধ করব, এ টুর্নামেন্টটা প্রতি বছর করতে। তবে এটা হতে হবে শুধুই স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য।

বিজয়ী দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অবশ্য উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেছেন, ‘ভালো লাগছে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তবে আমাদের দল আগে থেকেই ভালো ছিল। এবং যে দল তাতে বিশ্বাস ছিল আমরাই জিতব।’

(দ্য রিপোর্ট/এএস/সিজি/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩)