আরিফ সোহেল, স্পোর্টস এডিটর : বাজি ধরে বলতে পারি; এমন ম্যাচ দেখার জন্য শীত উপক্ষো করে দর্শকরা মাঠে আসেননি। মঙ্গলবার তারা এসেছিলেন বিজয়ের মাসের শেষ দিন বিজয় দিবস ক্রিকেটের ‘ফাইনাল’ দেখতে। অথচ সাকিবদের কাছে হার্ডার তামিমের দলকে পুরোটাই ফানুস মনে হয়েছে। প্রতিরোধহীন একচেটিয়া ম্যাচে ১৭৪ রানের প্রাইম ব্যাংকের কাছে ইউসিবি বিসিবি হেরেছে ৫৫ রানের বড় ব্যবধানে। যেখানে ‘ফাইনাল’ ম্যাচটিকে ফাইনাল মনে হয়নি।

শীতের প্রবলতা জেঁকে ধরেছিল শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে। তারপরও সমপর্যায়ের লড়াই দেখার আগ্রহে অনেকেই। যারা এসেছিলেন; তাদের প্রস্তুতি ছিল শতভাগ। ছিল শীতের পরিধেয় পোশাক-আশাক। রোদহীন পরিবেশ; থেকে থেকে শীতল ভারী বাতাস সব প্রতিকূলতা পাছে ফেলে যে প্রত্যাশা ছিল চোখ রাঙানোর; তার ছিটেফোঁটাও ছিল না। একতরফা ফাইনাল দেখে গা-গরম হওয়ারও সুযোগ ছিল না। উত্তেজনা ফানুস চুপসে গেছে তামিম ভক্তদের ধারাবাহিক উইকেটের পত্রপাট বিদায়ে। দারুণ কিছু ক্যাচ দেখে উল্টো মন ভরাতে হয়েছে বিসিবির সর্মকদেরও। সবগুলোই প্রায় সীমানার প্রান্ত ঘেষাঘেষি ক্যাচ। যেখানে রুবেল ছিলেন একটু বেশিই তৎপর। মাঠে হাজার আটেক দর্শক সেখানেই টিকিট কেটে ম্যাচ দেখার উসুল আদায় করেছে। ম্যাচ শেষে ২ ক্যাচের সঙ্গে এক উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন।

অবশ্য বিজয় দিবস টোয়েন্টি২০ ক্রিকেট ফাইনালকে ঘিরে প্রত্যাশা-স্বপ্নডালা মেলেছিল। একদিকে সাকিবের দল; অন্যদিকে তামিম আগুয়ান। কিন্তু সন্ধ্যা ৪টা ৪৫ মিনিটে ম্যাচটিকে মনে হয়েছে একেবারে ম্যারম্যারে। একটু ইস; উফ; আফসোস করার কিছু ক্রিকেটপ্রেমীরা পায়নি। অথচ আনামুল-লিটনের ব্যাটে বর্ণময় ও দুর্দান্ত সূচনা জমজমাট ম্যাচের সকাল উন্মোচিত করেছিল। সেই ধারাবাহিকতা ছিল প্রাইম ব্যাংকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং লাইনে। আনামুল ২৭ রানে ফিরে গেলেও লিটন সরকার (৬২) হাফ সেঞ্চুরি পর থেমেছেন। ২ উইকেটে ১১৫ রানের দৃঢ়-সমৃণ ওপেনিং জুটিপতন। তারপর সাব্বির ২৫, সাকিব ১৪, সৈকত ১৬ ও কাপালীর ব্যাটে ১৮ রানের ছোট ছোট কার্যকর ইনিংসে টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করেছিল প্রাইম ব্যাংক। ১৭৪ রান কম নয়; আর কমও বলা যায়। কারণ লিগ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে ইউসিবি বিসিবির ২১৭ রানও দেখেছিল শেরেবাংলা স্টেডিয়াম।

ওভারপ্রতি ৮.৭৫ যখন টার্গেট; তখন ঠিক সেভাবেই শুরু করেছিল ইউসিবি-বিসিবি। ৭ ওভারে ৫০ রানের পাশে ২ উইকেট; সমানেসমান বলাই যায়। কারণ ৭-এর ওপরে রান। ১৬ রানের তামিম (২) ফিরে যাওয়ার পর বিসিবির শীর্ষ রানার রনি (৩২) চলে যাওয়া গল্প বলে দিতে বুঝার কিছু বাকি থাকে না। ইমরুল কায়েস ২৩ রানে দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়েছে রুবেলের মিড উইকেটে। ৭৬ রানে ছক্কা নাঈমের (৬) রানআউটের অক্কার দৃশ্য বিসিবির বড় পরাজয়ের পথ সুনিশ্চিত করেছে। কারণ ততক্ষণে ৪ উইকেট নেই। বাকিদের মধ্যে মার্শাল আইয়ুবের ২১ রান ছিল বলার মতো। সাক্যুলে তামিমদের রান ১১৯। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ৫৫। বিজয় দিবস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানও করেছেন প্রাইম ব্যাংকের আনামুল। ৭ ম্যাচে তার রান ২৯৮। পেয়েছেন সেরা স্কোরারের পুরস্কার ১ লাখ টাকা।

ম্যাচ শেষে বিপত্তির কথা সহজবাক্যে স্বীকার করেছেন ইউসিবি-বিসিবির অধিনায়ক তামিম ইকবাল, ‘১৭৫ রানের টার্গেট নিয়ে আমরা ভালোই শুরু করেছিলাম। কিন্তু ধারাবাহিক উইকেট পতন আমাদের কক্ষচ্যুত করেছে। এই ধরনের ম্যাচের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। কারণ আমি আর কায়েস আউট হওয়ার পরপরই ওরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।’

আর সাকিব আল হাসানও যেন তার পণের কথা রেখেছেন। ফাইনালের আগে বলেছিলেন, ‘ফাইনালের স্নায়ুযুদ্ধেও আমরা জিততে চাই।’ মঙ্গলবার শিরোপা জয়ের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা টার্গেট নিয়ে খেলেছি। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংটায় আরো বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’

প্রাইম ব্যাংক-ইউসিবি ম্যাচ

প্রাইম ব্যাংক ইনিংস রান বল

এনামুল ব মুক্তার ২৭ ২৩ ২ ১

লিটন ব আরাফাত ৬২ ৩৯ ৬ ২

সাব্বির ব মুক্তার ৫ ১৮ ৪ ০

সুকিব ক ইমরুল ব আল আমিন ১৪ ১৪ ১ ০

সৈকত ক ইমরুল ব আল আমিন ১৬ ১৮ ১ ০

কাপালী ক মার্াল ব আল আমিন১৮ ৭ ২ ১

তানভির নট আউট ৩ ২ ০ ০

সোহাগ নট আউট ১ ১ ০ ০

অতিরিক্ত (লেবা ২, নো ৬) ৮

মোট (২০ ওভরি; ৬ উইকেটে) ১৭৪

উইকেট পতন: ১/৫৯ (এনামুল), ২/১১৫ (লিটন), ৩/১২৩ (সাব্বির), ৪/১৪৪ (সাকিব), ৫/১৭০ (কাপালী), ৬/১৭০ (সৈকত)।

বোলিং: আরাফাত ৪-০-৩৪-১, এনামুল জুনিয়র ৪-০-৩০-০, আল আমিন ৪-০-৩১-৩, মুক্তার ৪-০-৩১-২, শহীদ ৪-০-৪৬-০।

ইউসিবি ইনিংস রান বল

তামিম ক অ্যান্ড ব সোহাগ ২ ৩ ০ ০

রনি ক সৈকত ব রুবেল ৩২ ২৪ ৪ ১

ইমরুল ক বুরেল ব তাইজুল ২৩ ২২ ১ ১

মিঠুন ব শরীফ ১০ ১৩ ০ ০

নাঈম রান আউট ৬ ৭ ০ ০

মার্াল নট আউট ২১ ১৯ ১ ০

মুক্তার ক রুবেল ব তাইজুল ১০ ১৫ ১ ০

শহীদ ক তানভির ব সাকিব ০ ২ ০ ০

আরাফাত ক সোহাগ ব সাব্বির ৬ ১৫ ০ ০

আল আমিন নট আউট ১ ২ ০ ০

অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ৬) ৮

মোট (২০ ওভার; ৮ উইকেটে) ১১৯

উইকেট পতন: ১/১৬ (তামিম), ২/৫০ (রনি), ৩/৬৩ (ইমরুল), ৪/৭৬ (নাঈম), ৫/৭৬ (মিঠুন), ৬/৯৫ (মুক্তার), ৭/৯৫ (শহীদ), ৮/১১৮ (আরাফাত)।

বোলিং: সাকিব ৪-০-২৭-১, সোহাগ ৪-০-২৭-১, রুবেল ৪-০-১৯-১, শরীফ ৩-০-১৮-০, তাইজুল ৪-০-২১-২, সাব্বির ১-০-৩-১।

ফল : প্রাইম ব্যাংক ৫৫ রানে জয়ী।

টর্নামেন্ট : প্রাইম ব্যাংক চ্যাম্পিয়ন, রানার্ আপ উইসিবি বিসিবি একাদশ।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩)