পোলিং এজেন্টদের সভায় এমপি আফিলের ঘোষণা
‘যাবেন আর আসবেন, নো প্রবলেম’
যশোর সংবাদদাতা : যশোর-২ ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের শার্শা উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন ছয়টি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র দখল ও নিজস্ব লোক দিয়ে শতভাগ ভোট কাস্টিংয়ের পরিকল্পনা করেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন।
ঝিকরগাছা উপজেলার পারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ৩০ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান।
সভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে তার উপজেলা থেকে একশ নির্ভিককর্মী উপস্থিত থাকবেন। তারা ভোট দিয়ে আবারও লাইনে এসে দাঁড়াবেন এবং পুনরায় ভোট দেবেন। এ ভাবে সারাদিন তারা ভোট দিয়ে যাবেন। প্রশাসনিক কোনো ভয় নেই; সেটা আমি দেখবো।’
নির্বাচনী এজেন্টদের উদ্দেশে দেওয়া এ বক্তব্য রেকর্ড করেছেন যশোর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের লোকজন। অধ্যাপক রফিকুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহীন-উল-কবীর ওই রেকর্ড করা বক্তব্যের সিডিসহ বুধবার জেলা রিটানিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
যশোরের রিটানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে অভিযোগটি তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত ইলোক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন। কমিটি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করতে ০১৭১১-৫২৪৫৬০ নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আফিল গ্রুপের পরিচালক ও এমপি আফিলের ঘনিষ্ঠ সহচর মাহাবুবুল আলম লাভলুর সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা হয়। তাকে অভিযোগের বিষয় জানিয়ে এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য সাহায্য করতে অনুরোধ জানানো হয়। তিনি জানান, এমপি সাহেব কর্মীসভায় ব্যস্ত আছেন। তিনি এখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
এমপি শেখ আফিল উদ্দিন যা বলেছেন-
‘পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে যেন আমার ফিরে না আসতে হয়। সাহস সঞ্চারের জন্য আমি আপনাদের বলে যাচ্ছি, আমার শার্শা উপজেলায় আপনাদের ছয়টি ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাগোয়া। আমি আমার শার্শা উপজেলার আওয়ামী লীগের সকল নেতাদের ডেকেছিলাম গত পরশু দিন। সকলকে ডেকে আমার বলার আগেই তারা আমাকে বলছে, আমি নোটডাউন করছি, মাননীয় এমপি সাহেব ঝিকরগাছার নির্বাচন আগামী ৫ তারিখ, আমাদের কি করতে হবে হুকুম করেন। ইনশাল্লাহ আমি আমার নেতাদের নির্দেশ দিয়েছি। আপনাদের ভোটার লিস্ট নিয়ে নিয়েছি। আমার নেতারা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে, কোনো ভুল হবে না। শংকরপুর থেকে শুরু করে নাভারন হাজিরবাগ এ দিক দিয়ে চলে যাবে শিমুলিয়া দিয়ে গঙ্গানন্দপুর। অন্তত ছয়টি ইউনিয়নের সঙ্গে আমার ইউনিয়ন কানেকটেড। সুতারাং আমি বিশ্বাস করি সে দিন আমার সকল লোক আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের সাহস দিলাম। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, মনিরকে পছন্দ করি না, করি ভিন্ন ইস্যু। নৌকাকে ভোট দিতে হবে।’
‘আপনারা যদি কোনো প্রশাসনিক সমস্যায় পড়েন আমাকে বলবেন; আমি জবাব দেব। তার জন্য যা যা করণীয় ভোটমাঠে তা কিন্তু করা লাগবে, আমিতো মাইকে বলতে পারবো না কি করা লাগবে। মাইকে কিন্তু বলতে পারবো না; একা একা জিজ্ঞেস করলে বলে দিব। সুন্দর করে ভোট করবেন। ভোট যেন নৌকা পায় সেইভাবে সুন্দর করে ভোট করবেন। মাঠ যেন ফাঁকা না হয়ে যায়। যে একশ ছেলে থাকবে তারা ভোটের মাঠে লাইনে থাকবে। বুথে যাবে আবারও ওরা এসে পেছনে দাঁড়াবে। ওরা বাড়ি যাবে না। একশ ছেলে সবসময় লাইনে থাকবে বুথের ভেতরে ঢুকবে ও আবার পেছনে ৯৯ জন সামনে থাকবে। এইভাবে তারা যাবে আবার আসবে। লোক ও সাংবাদিকরা আসবে দেখবে যে মাঠ ভরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাজার হাজার লোক আসবে নো প্রবলেম। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবেন। শুধু যাবেন আর আসবেন। এতে ঝামেলার কিছু নেই।’
(দ্য রিপোর্ট/জেএম/এমএআর/লতিফ/জানুয়ারি ০১, ২০১৪)