বেসিক ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
বেসিক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন উর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযুক্তরা হলেন- বেসিক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচলক (ডিএমডি) এ মোনায়েম খান, ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ আলী ও ব্যাংকের গুলশান শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ এসএম জাহিদ হাসান।
কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বুধবার ওই তিন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে এলে দুদক তা আমলে নেয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএমডি এ মোনায়েম খানের দুর্নীতি
ডিএমডি এ মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে দুদকে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়েছে, ডিএমডি এ মোনায়েম খান অত্যন্ত সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি বেসিক ব্যাংকে ডিজিএম পদে যোগদান করেন। যোগদানের মাত্র ১৮ মাসের মধ্যেই তিনি ডিএমডি পদে পদোন্নতি পান।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নিজ গ্রামে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি গড়ে তুলেছেন। তার রয়েছে নতুন দামি গাড়ি। শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুরে নামে-বেনামে ক্রয় করেছেন শত শত বিঘা জমি। ঢাকার উত্তরায় ৩নং সেক্টরের ১০নং রোডে জমি ক্রয় ও বসুন্ধরা এলাকায় ডি ব্লকে ১০নং রোডের ৩২৫নং বাড়িতে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেছেন তিনি। এ বাড়িটি এবি ট্রেড লিঙ্কের লোনের বিপরীতে ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন।
এ ছাড়া তিনি মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে স্থায়ী আবাস গড়ার লক্ষে মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করেছেন কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। সম্প্রতি তিনি হোটেল ওয়েস্টিনের মেম্বার, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, খুলনা ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন। অনিয়মের মাধ্যমে গুলশান শাখায় তার শ্যালকের প্রতিষ্ঠান লিটন ওয়ার্ল্ডের নামে ৪০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করিয়ে দিয়েছেন। মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত। বিদেশে অগণিত টাকা পাচার করেছেন তিনি। এ কাজে সহায়তা করেছেন গালিব নামে একজন ব্যবসায়ী, যার মালয়েশিয়াতে ফ্যাক্টরি রয়েছে। তার একাধিক পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন। শান্তিনগর শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী এ সব কাজে তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।
শান্তিনগর শাখার জিএম মোহাম্মদ আলীর দুর্নীতি
বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার জিএম মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুদকে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আলী ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকে চাকরি করতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে রয়েছে একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ। ঢাকার মোহাম্মদপুরে কয়েক বিঘা জমি, বারিধারায় ডিপ্লোম্যাটিক এলাকায় বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ও নতুন গাড়ি ক্রয় করেছেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ব্যাংকে তার স্থায়ী আমানত ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা রয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন না নিয়ে তিনি বিতরণ করেছেন কোটি কোটি টাকা। নামমাত্র মূল্যের কোল্যাটারাল ওভার ভ্যালুয়েশন দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঋণ বিতরণ করেছেন। এ সব কাজে তাকে সহায়তা করেছেন ডিএমডি এ মোনায়েম খান। যা পরবর্তী সময়ে অডিট রিপোর্টে উঠে আসে।
এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে মোহাম্মদ আলী সরাসরি জড়িত। বিদেশে অগণিত টাকা পাচার করেছেন তিনি। এ কাজে সহায়তা করেছেন গালিব নামে একজন ব্যবসায়ী, যার মালয়েশিয়াতে ফ্যাক্টরি রয়েছে।
গুলশান শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ জাহিদের দুর্নীতি
বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ এসএম জাহিদের বিরুদ্ধে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়েছে, জাহিদ হাসান ২০১১ সালে উত্তরা শাখা থেকে বদলি হয়ে আসেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হন। নামে-বেনামে একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয় করেছেন তিনি। স্ত্রীকে দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর, অর্থ ও শতাধিক ভরি স্বর্ণালংঙ্কার। নিজ নামে ৬০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পরও তা গ্রহণ না করে এ সব ক্রয় করেছেন তিনি। তার রয়েছে ২/৩টি দামি গাড়ি। নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে তাঁত শিল্পে তিনি বিনিয়োগ করেছেন ৫/৬ কোটি টাকা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, যে সব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সিকিউরিটি নেই সে সব ব্যবসায়ীকে হাত করে তিনি অঢেল অর্থ হাতিয়ে নেন। ইতোমধ্যেই জাহিদের এ সব অপরাধের খবরে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে চট্টগ্রামে বদলি করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/ এইচবিএস/ এসবি/ এনআই/এইচএসএম/ এনআই/জানুয়ারি ০১, ২০১৪)