খালেদা জিয়াকে ঘিরে গোলক ধাঁধা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কি গৃহবন্দি? পুলিশি সহায়তায় সরকার কি তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে? নাকি তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুলিশি বাধার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দি থাকার অভিনয় করছেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দেশবাসী।
এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো সঠিক তথ্য নেই। তারা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ও খালেদা জিয়াকে বাইরে আসতে বাধা দেওয়াকেই দায়িত্বপালন হিসেবে মনে করছেন। একইসঙ্গে বালুভর্তি ট্রাক রেখে যানচলাচলে ব্যারিকেড দেওয়াও পুলিশের কাছে দায়িত্বপালন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও সহিংসতা সৃষ্টি না করতে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেওয়ারও দাবি জানান।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে গৃহবন্দি করা হয়নি। তিনি মুক্ত। তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু তথ্যমন্ত্রীর কথা আর খালেদা জিয়ার বাসার সামনের চিত্র এক নয়। এমনকি এ নিরাপত্তার সঠিক সংজ্ঞা নেই খোদ নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের কাছে।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার লুৎফুল কবির বলেন, খালেদা জিয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। সরকারি আদেশেই খালেদা জিয়ার বাসার সামনে দায়িত্ব পালন করি। ‘খালেদা জিয়া কি বন্দি, তাকে কোন আইনে এভাবে বন্দি রাখা হচ্ছে? তার বাসার সামনের অকেঁজো ট্রাক কেন সরানো হচ্ছে না’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সর্ম্পকে যা জানার সরকারের কাছ থেকে জানতে হবে। আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরকার আটক করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে বেশ কয়েকদিন ধরে আটক রাখা হয়েছে। তাকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এখনও তাকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রতিবেদকের দেখা খালেদা জিয়ার বাসার চিত্র
১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কর্মসূচি ঘোষণার পর ২৮ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার বাসাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নিয়ে আসে সরকার। মোতায়েন করা হয় ১০ প্লাটুন পুলিশ। সঙ্গে থাকে র্যাব। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পাশপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও সেখানে দায়িত্ব পালন করে। ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়াকে বাধা দেওয়া হয়। তিনি বাসার মূল গেটের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও চেষ্টা চালিয়েও পুলিশি ব্যুহ ভেদ করে বের হতে পারেননি। এরপর তিনি গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলতে চান। তবে তার বাসায় কোনো সংবাদকর্মীকে পুলিশ প্রবেশ করতে দেয়নি। অনেক কষ্টে, ঘুর পথে সংবাদকর্মীরা বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য সংগ্রহ করেন। এ সময় তিনি মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে বাধা ও তাকে ঘর থেকে বের হতে না দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি পরদিনও চলবে বলে ঘোষণা করেন। ২৯ ডিসেম্বর রাতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করার পুলিশি প্রচেষ্টায় যোগ হয় প্রথমে ৩টি পরে আরও ২টি মোট ৫টি ‘বালুবাহী ট্রাক।’ওই বালুভর্তি ট্রাকগুলো গুলশান-২ এলাকার ৭৯ নম্বর রোডের খালেদা জিয়ার বাড়ির দুইপাশে এলোপাতাড়ি ফেলে রাখা হয়।
পুলিশ সংবাদকর্মীদের জানায়, ‘ট্রাকগুলো বালু নিয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে বিকল হয়ে সেখানে পড়ে আছে।’ গত কয়েকদিন ধরেই ট্রাকগুলো বিকল হয়ে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে পড়ে থাকে। তবে ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাক্ষাৎ করতে গেলে হঠাৎ করে বিকল ট্রাকগুলো সচল হয়ে ওঠে। সচল ট্রাকগুলো সরিয়ে নিয়ে হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনকে ওই বাসায় প্রবেশে সুযোগ করে দেওয়া হয়। তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে চলে যাওয়ার পর ট্রাকগুলো আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে আবারও অচল হয়ে পড়ে। একই চিত্র দেখা যায় ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে। সে দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। তিনি যাওয়ার পর অচল ট্রাক জায়গা থেকে সরে যায়। মজিনা প্রায় দেড় ঘণ্টা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে চলে যাওয়ার পর ট্রাকগুলো আগের স্থানে ফিরে অচল হয়ে যায়। একই সঙ্গে পুলিশি প্রহরাও চলতে থাকে। এ ছাড়াও ২৮ ডিসেম্বর রাতে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার প্রাপ্ত সরকারি পুলিশ প্রটোকলও প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এখন পর্যন্ত তা আর বহালও করেনি সরকার।
এ সম্পর্কে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্দেশ না আসা পর্যন্ত খালেদা জিয়া মুক্ত হচ্ছেন না। তার বাসার সামনে থেকে নিরাপত্তাও ওঠানো হবে না। খালেদা জিয়ার বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ এলে তার নিরাপত্তা ওঠানো হবে।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/কেজেএন/এসআই/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ০১, ২০১৪)