দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অতীতের মতো এবারও দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু, হক-ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর প্রতীক, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক নৌকা। সেই নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আসুন, আমরা বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। দেশ গড়ার এই সংগ্রামে জনগণের জয়, বাংলাদেশের জয় অনিবার্য।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ সব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার হিসেবে আমরা গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছিলাম। তাই, সাংবিধানিকভাবেই আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য। ২০১০ সাল থেকে বারবার আমি বিএনপি নেত্রীকে আহ্বান জানিয়েছি আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে এগিয়ে আসতে। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে স্বরাষ্ট্রসহ যেকোনো মন্ত্রণালয় দিতে আমি প্রস্তুত ছিলাম। আমি নিজে টেলিফোন করে বিরোধীদলীয় নেতাকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। তিনি সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন। বারবার আমাকে আলটিমেটাম দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম, জনগণের ওপর আস্থা রেখে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিবে। কিন্তু আমাদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই।

শেখ হাসিনা বলেন, শুধু তাই নয়, হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। ককটেল আর পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। পুলিশ, বিজিবিসহ অনেককে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, লুটতরাজ করেছে। রাস্তা কেটে, রেল লাইন উপড়ে ফেলে, গাছ কেটে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে তারা চেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগের লক্ষ্য তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি। ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই গত নির্বাচনের আগে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছি। একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা দেশকে অভীষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা যেখানে মাথা প্রতি গড় আয় বর্তমানের ১০৪৪ ডলার থেকে ১৫০০ ডলারে উন্নীত করা হবে। প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ ও দারিদ্রের হার বর্তমান ২৬ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে।

তিনি বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সংসদের ভেতরে ও বাইরে সংসদ সদস্যদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। আইনের সমান প্রয়োগ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

আমি আশা করি, গত পাঁচবছরে অনুষ্ঠিত ৫ হাজার ৮০৩টি স্থানীয় সরকার ও উপ-নির্বাচনে আপনারা যেভাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছেন তেমনিভাবে আগামী ৫ জানুয়ারি একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আপনারা ভোট দেবেন। পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবেন।

তিনি বলেন, আপনাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হবো।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসবি/আরকে/জানুয়ারি ০২, ২০১৪)