মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, সাতক্ষীরা : ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাতক্ষীরা জেলার চারটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে ইতোমধ্যে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন দুজন প্রার্থী। বাকি দুটি আসনে নিরুত্তাপ নির্বাচন হলেও এ আসন দুটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ!

বরাবরই সাতক্ষীরায় জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ দল নির্বাচন বর্জন করেছে। সঙ্গত কারণে সাতক্ষীরায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিয়ে এক ধরনের সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

যদিও প্রশাসন বলছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে যৌথবাহিনীসহ সেনাবাহিনী। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে জন্য নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৪ হাজার ২৭৭ জন। তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮০ হাজার ২০৮ জন।

দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য সাতক্ষীরা-১ আসনে ১৪৬ ও সাতক্ষীরা-২ আসনে ১৩১টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৪১২টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে এবার সাতক্ষীরার সকল কেন্দ্রকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রার্থীরাও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সকল কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে দুটি আসনের ৩৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার জন্য ইতোমধ্যে ৪১টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। একজন ইন্সেপেক্টর অথবা একজন সাব ইন্সেপেক্টর এ সব টিমের প্রধান থাকবেন।

সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার বিজ্ঞান শিক্ষক রাজু আহমেদ জানান, তাকে নির্বাচনে সদরের রইচপুর মাদ্রাসা কেন্দ্রের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দায়িত্ব পালনে অন্য বারের মতো স্বাচ্ছন্নবোধ করছেন না। ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিয়ে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে জানান তিনি।

পলাশপোল আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঙ্গল কুমার পাল জানান, তাকে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গার গোবিন্দকাটি স্কুল কেন্দ্রের সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যবার তিনি ভোটের দিন সকালে বাড়ি থেকে যান। এবার আগের দিন পুলিশের সঙ্গে সেখানে যাবেন। আবার পুলিশের সঙ্গে ফিরে আসবেন বলে জানান তিনি।

এ দিকে বিগত নির্বাচন ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাতক্ষীরায় ৯১-এর নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে জামায়াতের শেখ আনছার আলী, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান, সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি) আসন থেকে জামায়াতের মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী, সাতক্ষীরা- ৪ (দেবহাটা-কালিগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মুনসুর আহমেদ ও সাতক্ষীরা- ৫ (শ্যামনগর) আসন থেকে নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম।

৯৬ এর নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ কামাল বখত সাকী, সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী কাজী শামসুর রহমান, সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোখলেসুর রহমান, সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ও সাতক্ষীরা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে ফজলুল হক।

২০০১ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল খালেক মন্ডল, সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী, সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে জাতীয় পার্টি (না-ফি) এর প্রার্থী কাজী আলাউদ্দীন ও সাতক্ষীরা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম।

নির্বাচনের এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে সাতক্ষীরাতে বরাবরই আওয়ামী লীগের নাজুক অবস্থান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন কমে ৪টিতে দাঁড়িয়েছে।

তারপরও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার মধ্যেও সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করে।

এমন বাস্তবতায় এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান জানান, তারা সকল কেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে ও পরে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে।

রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধিনে ১৪টি মোবাইল কোর্ট থাকবে, থাকবে চারটি থানায় চারটি বিশেষ টিম। এ ছাড়া দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর তত্ত্বাবধানে ইলেক্টটরাল কমিটি মাঠে থাকবে। এ ছাড়া মাঠে থাকবে চার প্লাটুন বিজিবি। র‌্যাবের ৮টি টিম ও টহলে থাকবে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৪৭ জন আনসার সদস্যরাও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া সার্বিকভাবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সকল বিষয় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমআর/এসবি/এসআই/জানুয়ারি ০২, ২০১৩)