কান্না দিয়ে নিজের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয় সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু। কানে কানে তা পৌঁছে যায় মানুষ থেকে মানুষে। খবর হয়। মানুষের জন্মের মধ্যে দিয়ে যে খবরের জন্ম, শিশুর কান্নার ধীর রূপান্তরে যে ভাষা, পৃথিবীর প্রথম মানুষ থেকে আজ অবধি তাই বিবর্তিত হচ্ছে। তা যে কখন কীভাবে খবর প্রকাশের প্রধান উপাদান হয়েছে জানা যায় না। মুখের কথা অক্ষর বানিয়ে চিঠি লিখেছে মানুষ। এই চিঠি কবুতরের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছে দূরবাসী প্রিয়জনের কাছে। রাজা তার আদেশ ও উপঢৌকন পৌঁছে দিতে কাজে লাগিয়েছেন ঘোড়াকে। মানুষ মানুষে যোগাযোগের সে সূচনা এখন নিয়েছে বিস্ময়কর গতি। প্রযুক্তি জন্ম দিয়েছে আশ্চর্য ওয়েব দুনিয়ার। চাঁদের দেশে মানুষ পৌঁছানোর চাইতেও এ কম কী! আলোর কণা বাতাসের পাখনায় ভর করে অক্ষর, ছবি, শব্দ মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মেক্সিকো। চাচই গ্রাম থেকে ঢাকার মতিঝিল। টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, মোবাইল, ফেসবুকসহ যাবতীয় সামাজিক মাধ্যমগুলো সারা দুনিয়াকে একটি গ্রামে রুপান্তরিত করেছে। কানাডিয়ান কবি এলিস অ্যান মুনরোর নোবেল প্রাপ্তির খবর নরওয়েবাসীর সঙ্গেই জেনে যাচ্ছেন আমাদের দেশের মানুষ। লন্ডনের ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কৃত নতুন ওষুধের নাম দশ সেকেন্ডেই জানছেন বাংলাদেশি তরুণ চিকিৎসক। নয় আর পরের দিনের খবর, কাগজের অপেক্ষা। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জানা ও তার অনাড়ম্বর নিপাট প্রকাশই উত্তরাধুনিক সাংবাদিকতা।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোরের আমরা ক’জন তরুণ সংবাদযোদ্ধা পথ চলতে চাই রাজনীতির বিভাজন রেখা থেকে দূরে থেকেই। বিশ্ব আধিপত্যবাদীদের প্রধান হাতিয়ার প্রচলিত সংবাদমাধ্যম থেকে সতর্ক অবস্থান থাকবে আমাদের। অক্ষর, ভিডিও, অডিওসহ সবকিছুই যুক্ত থাকছে। মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোনও।

আজকের এই শুভ মুহূর্তে পঞ্চাশের দশকের অন্যতম প্রিয়কবি আজীজুল হকের কবিতার কিছু চরণ মনে পড়ছে। তার পঙক্তির গোটা গোটা সোনালি অক্ষর একটা স্বপ্নের তীরে আজও জাগিয়ে রাখে আমাদের। যে কারণে এই বিপণ্ন সময়েও মনে পড়ছে :

`কাঁদবে, কেঁদে কেঁদে প্রবল ঘুমাবে। দেখবে/যা-কিছু উজ্জ্বল ছিল, নক্ষত্র ও রাত/সেই রাতে অগ্নিকুণ্ডে চক্রাকার মানুষের মুখ/ঘনদৃষ্টি অশ্রুবিন্দু তৃষ্ণার আগুন/নিষ্প্রভ হয়েছে, যা কিছু বিশাল অগাধ,/অন্ধকার, ঈশ্বরের গুঢ় স্বপ্ন, সময় ত্রিকাল/দাঁড়িয়েছে বিরুদ্ধে তোমার।’

জাতীয় এবং বৈশ্বিক সংকটে আর ব্যক্তিক টানাপড়েনে আমরা আশাবাদকে প্রবলভাবে লালন করি। স্বপ্ন বাঁধি অগুনতি ঘর-গেরস্থালির। অথচ এ মানব সভায় সোনালি স্বপ্ন সকল নিহত হয় স্বাপ্নিকেরই হাতে। আগুন আগুন চিৎকার আজ সর্বত্র বিস্তৃত। কিন্তু কোথাও কোনো প্রকার আগুন নেই। এমন এক অস্থির জ্বর ক্লান্ত করে সমূহ মানব সভ্যতাকে; প্রবৃত্তি-প্রবণতাকে। কবির চোখের মতো আমাদেরও যেন একই দশা। আজ পাথর আর তার করতলে যেন পাথর-ঘর্ষণ ঘনক্ষত। সকল আশাবাদের ধ্বংসস্তূপে তিনি এখন নির্বিকার :

`নির্বিকার আমি কোন স্বপ্নকে দেখি না। দেখি
জলজ পাথর চোখে শিলীভূত হাত, দুই
হাতের আঙুলে
পাথর-ঘর্ষণ ঘ্রাণ
ক’টি কাল দাগ

করতলে স্ফূলিঙ্গের নীলবর্ণ ক্ষত।’

-হ্যাঁ, এ বোধজাগানিয়া উচ্চারণ থেকে আমাদের উত্থানপর্ব শুরু হচ্ছে। দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোর-এর পক্ষে এ শুভ মুহূর্তে সকল পাঠক, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও নানাস্তরের মিডিয়াকর্মীকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।

আমরাও চাই আপনাদের শুভকামনা।