ওয়াহিদ সুজন

নতুন বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোর ডটকম। নতুন বছরকে সাধারণত শুভ সূচনা হিসেবে ধরা হয়। সেদিক দেখে নতুন একটি যাত্রাকে শুভই বলতে হবে। শুভ হোক দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোর ডটকমের যাত্রা।

নতুনের সঙ্গে শুভ-অশুভর ধারণা তাৎপর্যপূর্ণ। কেন না, আমরা পুরাতনের স্মৃতিচারণকে যতই নির্বাচকের ভূমিকায় নিই না কেন, বুঝতে পারি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার হিসেব মিলাতে অনেক গরমিলের সন্ধান মেলে। আবার আমরা অতীতেই বসবাস করি। অনেক ক্ষেত্রে তাকে বলি ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ’। খারাপ বলার মধ্য দিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিত শুভাকাঙ্ক্ষা থাকে। কেউ ভাবতে পারেন কথা ও ভাবার মধ্যে একটা অমিল আছে। যাইহোক, মিল ভালোবাসি বলে অমিল-গরমিলের প্রতি আমাদের মনোভাব নঞর্থক। যদিও অমিল বা গরমিলই মিলকে সম্পন্নতা দেয়। এই সম্পন্নতা এক অর্থে হিসেব-নিকেশের বিষয়। সেই হিসেব-নিকেশে সংবাদ মাধ্যম গণপরিসরে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। এই ভূমিকাকে আমরা বরাবরই ইতিবাচক বলে গণ্য করি। অভিযোগের তীর প্রায়্ই অব্যর্থ না হলেও আমরা কোনো একটি ঘটনায় গণমাধ্যম কী ধরনের তথ্য সরবারহ করে, কী জানায়, কী গোপন করে অথবা তারা কেমন বিশ্লেষণ উপস্থিত করবে তার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। গণমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব বটে এই অপেক্ষার ক্ষুণ্নবৃত্তি করা।

ফিরে আসি নতুন ও পুরাতনের সম্পর্কে। প্রতিটি মুহূর্ত প্রকৃতিতে হয়তবা নতুন মুহূর্ত। কিন্তু আমরা সচরাচর তা খেয়াল করি না। যতই বেখেয়াল হোক না কেন আমরা কোনো না কোনো মুহূর্তে এসে নতুনকে স্বাগত জানাই এবং উদযাপন করি। এই উদযাপনের সামাজিক মূল্য কম নয়। উদযাপনের মধ্যে হিসেব-নিকেশ থাকে। চোখ সামনের দিকে থাকলেও হিসেব-নিকেশ থাকে পশ্চাতে। অর্থাৎ নতুনত্ব আসলে ভূত আর ভবিষ্যতের মাঝে বন্ধন। এই বন্ধন একরৈখিক কোনো বিষয় নয়। সে নিজেকে নানান পরিপ্রেক্ষিতে আর বাদ-বিবাদের মধ্যদিয়ে আবিষ্কার করে। যেহেতু বাংলাদেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিয়ে কথা বলছি, সেহেতু (সঙ্কীর্ণ অর্থে) এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, তার মানুষ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ঐক্য-অনৈক্য ও তার বিশ্ব ইতিহাস। ইতিবাচক দিক থেকে চিহ্নিত করতে হবে নতুন সম্ভাবনা ও ইশারার অভিমুখ। এটা হয়তো দুলর্ভ কিছু নয়- বরং গণমানুষের ভাব-ভাষার মধ্যে সদা হাজির থাকে।

সাধারণত পুরাতন জঞ্জাল সাফের কথা বলা হলেও আসলে আমরা পুরাতন সম্পর্ককে নতুনভাবে হাজির করি। তাই নতুন যে কোনো কিছুর আবির্ভাব মানে হুট করে অতর্কিত চলে আসা কিছু নয়। বরং ইতিহাসের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন মুহূর্ত তার আবির্ভাব সম্পন্ন করে। একটি গণমাধ্যম যখন নতুনরূপে হাজির হয়- আসলে সে অগ্র-পশ্চাত সম্পর্কচ্যুত কিছু নয়। বরং ইতিহাসের ভেতর মানুষ ও আরও অন্যান্য যা থাকে তার সম্পর্ক সূত্রের এক একটা রূপ বটে। ফলে নতুন বলে যা কিছু তা আসলে অনেক ঘটনা ও অভিজ্ঞতার ভেতর পাওয়া।

বাংলাদেশের অনেক অনেক গণমাধ্যমের মধ্যে হাজির হলো দ্য রিপোর্ট টুয়েনটিফোর ডটকম। প্রতিটি হাজিরানার মতো এর সম্ভাবনা ও সীমা অনন্য। কিন্তু তার ইতিহাস আসলে সবার ইতিহাস। সেই পুরনো সম্পর্ককে সে কিভাবে ভবিষ্যতে হাজির করবে, কিভাবে তথ্য দেবে বা কিভাবে বিশ্লেষণ করবে- সেটা দায়ের বিষয়। সে দায় থেকে আমরা কেউ মুক্ত নই। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একে অনুভবের মধ্যে ধারণ ও তার প্রকাশ। সে প্রকাশে অসঙ্কোচ কিনা, সেটা নীতি নির্ধারণের বিষয়। কিন্তু আমরা যখন এমন প্রশ্নের সামনে নিজেদের দাঁড় করাই- তখন আর পেছনে ফেরার উপায় নেই। পেছন কোনো নেতিবাচক শব্দ না হলেও এখানে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে বা সত্য গোপন করা। ব্যক্তি যখন সত্য জানাবে বলে তার ইতিহাস ও মানুষের মুখোমুখি হয় তখন নিজেকে নতুন বলে দাবি করার অর্থ হচ্ছে- সমাজের যা কিছুকে জঞ্জাল মনে করে এবং যা কিছু মানুষে মানুষে এবং মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের জায়গায় বিচ্ছিন্নতা আনে তাকে মোকাবেলা করা। দ্য রিপোর্টের আবির্ভাব সত্য প্রশ্নে ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ইতিবাচক ইশারা দেবে। সেই ইশারা হোক বিশ্ব মানবিকতার ইশারা।

লেখক : সাংবাদিক