শেষযাত্রার ভিন্নরূপ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মানুষ মরণশীল। প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রত্যেকটি মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়। আর মৃত্যুর পর তার কাছের মানুষদের আয়োজন করতে হয় মৃতদেহ সৎকারের। মৃতের প্রতি সম্মান জানাতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজন করা হয় শেষকৃত্যের।
ভিন্ন আঙ্গিকের কয়েকটি শেষকৃত্যের ধরণ জানাতেই এ আয়োজন।
অ্যান্ডোকানিবালিজম
অনেক সংস্কৃতিতে মৃতের প্রতি সম্মান জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মৃত ব্যক্তিকে খেয়ে ফেলা। নৃতাত্ত্বিকরা একে ‘অ্যান্ডোকানিবালিজম’ বলে অভিহিত করেছেন। মৃত ব্যক্তির মাংস খাওয়াকে জীবিত ও সদ্য মৃত ব্যক্তির মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপনের যোগসূত্র হিসেবে দেখা হয়। পাপুয়া নিউগিনির মেলানেশিয়ান ও ব্রাজিলের ওয়ারি গোত্রের মধ্যে এক সময় অ্যান্ডোকানিবালিজমের প্রচলন ছিল।
আকাশ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
তিব্বতে অবশ্য মৃত মানুষের মাংস খাওয়া হয় না। তবে নিজেরা না খেলে কি হবে পশু-পাখিকে খাওয়াতে তো মানা নেই। তাই তিব্বতে কেউ মারা গেলে মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে রাখা হয় উঁচু কোনো স্থানে, যেন পশু-পাখি মৃতদেহ খেতে পারে। এ প্রথাকে বলা হয় ‘আকাশ-অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’। বিশেষ করে পাখিদের আকর্ষণ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে। তাদের ধারণা পাখি মৃতদেহ খেয়ে আত্মা স্বর্গে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মৃতদেহ সৎকারের এ প্রথা নিষ্ঠুর মনে হলেও বৌদ্ধ ধর্মের ধারণা চেতনা থেকেই এই প্রথা এসেছে। বৌদ্ধধর্মে মৃতদেহ সংরক্ষণকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয়। তিব্বতে হাজার বছর ধরে চলে আসছে মৃতদেহ সৎকারের এই প্রথা। আজও তিব্বতের শতকরা ৮০ ভাগ বৌদ্ধ সৎকারের জন্য এই প্রথা বেছে নেয়।
বৃক্ষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলন আছে এই ধরণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। এই ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মৃতদেহকে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এক সময় পশুপাখি খেয়ে ফেলে এই মৃতদেহ।
সমুদ্র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
জলদস্যুরা বেছে নেয় এই ধরনেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। সাধারণত জলদস্যুদের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও মৃত্যু সমুদ্রেই হয়। তাই শেষ শয্যা হিসেবেও সমুদ্রকেই বেছে নেয় তারা।
দ্বিতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
প্রশান্ত মহাসাগরের মেলানেশিয়া দ্বীপের অধিবাসীরা একই ব্যক্তির দুইবার শেষকৃত্য করে। প্রথমবার তারা মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়। এরপর হাড়গুলো দিয়ে চামচসহ অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করে। তারা এটাকে মৃতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ মনে করে।
জলদস্যুদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
দশম শতাব্দিতে জলদস্যুদের মধ্যে প্রচলণ ছিল এ ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার। কোনো জলদস্যু সর্দার মারা গেলে এই প্রথায় শেষকৃত্যের আয়োজন করতো তারা। প্রথমে জলদস্যু সর্দারের মৃতদেহ নতুন কাপড়-চোপড় পরিয়ে সাময়িকভাবে একটি কবরে রাখা হতো। তার মৃতদেহের সঙ্গে একটি ক্রীতদাস নারীকে দেওয়া হতো। তাকে রাত-দিন পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি মাদক পানীয় পান করতে দেওয়া হত। দশদিন পর চূড়ান্ত শেষকৃত্যের দিন ওই নারীকে গ্রামের প্রত্যেকটি পুরুষ ধর্ষণ করতো। এরপর ওই নারীকে হত্যা করে সর্দারের মৃতদেহের সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হতো।
মৃতের প্রতি সম্মান জানাতে আঙুল ছেদ
মৃতের প্রতি সম্মান জানাতে ও শোকের গভীরতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে পাপুয়া নিউগিনির ডানি গোত্রের মানুষ তাদের হাতের আঙুল কেটে ফেলতো। মৃত ব্যক্তির কোনো নারী আত্মীয়েরই হাতের আঙুল কাটা হতো। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের হাতের আঙুলও কাটা হতো। হাতের আঙুল শক্ত করে বেঁধে কুড়াল দিয়ে কেটে ফেলা হতো। কাটা অংশ পরে শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলে সংরক্ষণ করা হতো। এই প্রথা অবশ্য এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এখনো এই গোত্রের বয়স্ক ব্যক্তিরা এর চিহ্ন বহন করছেন।
(দ্য রিপোর্ট/কেএন/এমডি/আরকে/জানুয়ারি ০৩, ২০১৪)