জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : তৃতীয় দফায় পিছিয়ে যাচ্ছে ওষুধ শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ। ২০১০ সালে এটি সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৫ সাল পর্যন্ত নতুন করে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সেই সঙ্গে ব্যয় ও বাড়ছে ৩৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে সমস্যা এবং প্রকল্পের নতুন কার্যক্রম সংযোজন হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের কারনে স্থগিত থাকা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক আবারও শুরু হলেই এটি অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানাগেছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল তথা এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট উৎপাদনের জন্য একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মাধ্যমে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি বর্তমান বিদেশ নির্ভর কাঁচামাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এসব দিক বিবেচনা করে এর সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে পেটেন্ট ড্রাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রয়েলটি প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক ও দেশীয় বাজারে ক্রম বিকাশমান ওষুধ শিল্পকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করার জন্য এর ৯০ শতাংশ আমদানি নির্ভর কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করতে হবে। এ লক্ষ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার পশ্চিম বাউশিয়া ও লক্ষীপুর মৌজায় এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮ সালের ২২ মে এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ওই সময় ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছিল এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১৩ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক)।

পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণের সময় ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বরাদ্দের চেয়ে জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এসময় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

এ বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুরোধক্রমে আরো একবছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় পরিকল্পনা কমিশন।

কিন্তু এবারও লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় জমির সমস্যা, পূর্ত কাজের পরিমান ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় আবারও প্রকলল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় প্রস্তাবিত ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে ব্যয় যুক্তিযুক্তকরন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আইএমইডি এই ব্যয় থেকে ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ টাকা করার পরামর্শ দেয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পুর্নগঠিত আরডিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) মোট ব্যয় আরো কমিয়ে ৩৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং উদ্যোক্তা তহবিল থেকে ৮০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশোধনের প্রধান কারণ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়াকে দেখানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পে ২০০ একর জমি অধিগ্রহনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০১০ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৯৭ দশমিক ৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে একজন জমি মালিক হাইকোটে রিট আবেদন করায় অবশিষ্ট জমি পেতে দেরি হয়। সম্প্রতি রিট আবেদনটি হাইকোটে নিস্পত্তি হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে চলতি বছরের ৩ মার্চ অবশিষ্ট ২ দশমিক ৪৪ একর জমি বিসিককে দেওয়া হয়েছে।

আগের পাওয়া জমি উন্নয়নের কাজ ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে। আবার নতুন করে পাওয়া অবশিষ্ট জমির উন্নয়ন কাজের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রকল্পে নতুন কার্যক্রম যুক্ত হওয়ার বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ১২ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন ও দুটি রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণের নতুন অঙ্গ সংযোজন করা হয়েছে।

ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের পিডব্লিউডির নতুন রেট সিডিউল অনুযায়ী পূর্ত কাজের ব্যয় পুন:প্রাক্কলন করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/জানুয়ারি ০৩, ২০১৩)