রাত পোহালেই শুরু হতে যাচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাষায়, ‘সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার’এই নির্বাচনী কার্যক্রম অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে ভোট ছাড়াই। বাকি অর্ধেক কাজের জন্য যে মহড়া চলছে, তাতে প্রার্থীরা মঞ্চে উঠেছেন অনেক আগেই। কিন্তু জনগণের সাড়া তেমন পাচ্ছেন না।

প্রধান বিরোধী দলের নেতা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশবাসীকে নির্বাচনের নামে ৫ জানুয়ারির এই কলঙ্কময় প্রহসন পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

একইভাবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

এরপরও সরকারি দল বলছে, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলেছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ ও হামলায় শতাধিক মানুষের প্রাণ গেলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, হরতাল-অবরোধের কোনো প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না।

দুই দিনে দেশব্যাপী ভোটবিরোধীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোতেও কোনো প্রভাব হয়ত পড়বে না! কারণ এ রকম প্রভাবহীন ‘অবাধ-সুষ্ঠু’ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভোটাররা পেয়েছেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশ বিপদে পড়লে দায়ী থাকবে সরকার।

বহুল সমালোচিত ও প্রাণক্ষয়ের এ নির্বাচনে আইনগত ও নৈতিক বৈধতা নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সব সমালোচনাই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ রকম নির্বাচন অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। তবে নিজেদের দেওয়া সাংবিধানিক ব্যাখ্যার মধ্যেও যুক্তিপূর্ণ কিছু বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার নব্বই দিন আগে এবং সংসদ ভেঙে যাওয়ার নব্বই দিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। ক্ষমতসীন দল প্রথমটিকেই একমাত্র পথ মেনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা একাদশ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনার কথা বলছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বক্তব্যেও এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হতে হবে। বিরোধী দল চাইলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন করে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দশম নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই যখন একাদশ নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে, তখন তা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না।’

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এক বিবৃতির মাধ্যমে রবিবারের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বোদ্ধা মহলের প্রশ্ন- একই সরকার যদি একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগ্রহ দেখাতে পারে, তাহলে বর্তমান সংবিধানের আলোকে সংসদ ভাঙার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ কেন নিচ্ছে না?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আইনগতভাবে এ নির্বাচন বৈধতা পেলেও নৈতিকভাবে এর কোনো বৈধতা থাকবে না।’

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/শাহ/এএল/জানুয়ারি ০৪, ২০১৪)