thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১,  ৫ রবিউস সানি 1446

আন্তন চেখভ

২০১৪ জানুয়ারি ২৯ ০১:৪৮:১০
আন্তন চেখভ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ছোটগল্পকার, নাট্যকার ও চিকিৎসক আন্তন পাভলোভিচ চেখভ দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগে ১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার বিবেচনা করা হয়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেক্সপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি তার নামও উল্লেখ করা হয়।

পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ও জেভগেনিয়া জাকোভলেভনার ছয় সন্তানের মধ্যে চেখভ ছিলেন তৃতীয়। জেগোরোভিচ তাগানরোগে একটি ছোট দোকান চালাতেন। বাবা হিসেবে ছিলেন কঠোর ও রূঢ়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন চেখভের রচনার কপট চরিত্রগুলো তার বাবার আদলে তৈরি হয়েছে। ১৮৭৬ সালে একটি নতুন বাড়ি তৈরিতে অনেক বেশি খরচ করে তিনি দেউলিয়া হয়ে যান। ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কারাবাস এড়াতে তিনি মস্কোতে পালিয়ে যান। এরপর চেখভের পরিবার খুবই দরিদ্র হয়ে পড়ে।

তাগানরোগে তার পড়াশোনার হাতেখড়ি। পরিবার মস্কো চলে গেলেও বিষয়সম্পত্তি বিক্রি ও স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার জন্য চেখভকে তাগানরোগেই রেখে আসা হয়। এ সময় তিনি নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করতেন। খরচের জন্য গৃহশিক্ষকতা, গোল্ডফিঞ্চ পাখি ধরে বিক্রি এবং খবরের কাগজে ছোট ছোট স্কেচ আকাঁসহ নানা কাজ করেন।

১৮৭৯ সালে চেখভ স্কুল শেষে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। অল্প কিছুদিন পরে মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৮৪ সালের গ্রীষ্মে ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করেন। চিকিৎসাকে পেশা পেশা হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু দরিদ্রদের চিকিৎসায় টাকা নিতেন না।

মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে চেখভ পুরো পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। খরচ যোগাড়ের জন্য রুশ জীবন নিয়ে ছোট ছোট হাস্যরসাত্মক নাটক বা রচনা লিখতেন এবং অলঙ্করণমূলক নকশা আঁকতেন। এর অনেকগুলোই লিখেছিলেন আন্তোশা চেখন্তে এবং রাগহীন মানব ছদ্মনামে। ১৯৮২ সালের মধ্যেই খ্যাতনামা প্রকাশক নিকোলাই লেইকিনের পত্রিকা অসকোলস্কিতে তিনি লিখতে শুরু করেন।এই সময়টাতে চেখভের লেখা গল্প ও অন্যান্য রচনার ভাব ছিল পরিণত সময়ের গল্প উপন্যাসের চেয়ে বেশি রূঢ়। ১৮৮৬ সালের শুরুর দিকে শিল্পপতি আলেক্সি সাভরিনের মালিকানাধীন ও সম্পাদিত সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা নোভায়া ভ্রেমায়াতে লেখার আমন্ত্রণ পান। লেখার প্রতি লাইনের জন্য লেইকিনের চেয়ে দ্বিগুণ সম্মানী এবং বড় লেখা প্র্রকাশের সুযোগ পেতেন। চেখভ ও সাভরিন আজীবন বন্ধু ছিলেন।

১৮৮৭ সালে চেখভের ছোটগল্প সংকলন ‘অ্যাট ডাস্ক’ বহু আকাঙ্ক্ষিত পুশকিন পুরস্কার জিতে নেয়।

১৮৮৪ ও ১৮৮৫ সালে চেখভের কাশির সঙ্গে রক্ত পডো শুরু হয় এবং ১৮৮৬ সালে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। ১৮৮৭ সালের বসন্তে তাগানরোগে পুরানো বাড়ি এবং দক্ষিণ রাশিয়ার কিছু শহর ও ইউক্রেন ভ্রমণ করেন। ভ্রমণকালে স্তেপ অঞ্চলের সুন্দর ভূ-প্রকৃতি তাকে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ফিরে আসার পর ছোট গল্প ‘দ্য স্তেপ’ লিখেন।

১৮৮৭ সালের শরতে কোর্শ নামের এক থিয়েটার ব্যবস্থাপকের অনুরোধে লিখেন নাটক ‘ইভানভ’। ১৮৮৯ সালে যক্ষায় ভাই নিকোলাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় লিখেন গল্প ‘এ ড্রিয়েরি স্টোরি’। ১৮৯০ সালে ট্রেন, ঘোড়াগাড়ি ও স্টিমারে এক কষ্টকর ভ্রমণে বের হন। জাপানের উত্তরে সাখালিন দ্বীপের বন্দীশিবির দর্শন করেন। এখানে তিনি একটি আদমশুমারির জন্য কয়েদিদের ও বসতি স্থাপনকারীদের সাক্ষাৎকার নিতে তিন মাস কাটান। এ সময় কিছু চিঠি লিখেন। এগুলোকে তার লেখা সেরা চিঠি হিসেবে গণ্য করা হয়। পরে প্রকাশিত হয়েছিল ‘অস্ট্রোভ সাখালিন’ নামের বই- যা সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের জন্য মূল্যবান কাজ। তার ছোট গল্প ‘দ্য মার্ডারার’ এ রয়েছে সাখালিনের স্মৃতি।

১৮৯২ সালে মস্কোর চল্লিশ মাইল দক্ষিণে মেলিখোভোতে একটি ছোট জমিদারি কিনে পরিবারসহ বাস করেন ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত। ১৮৯২ সালের কলেরা প্রাদুর্ভাব এবং দুর্ভিক্ষ উপদ্রুতদের জন্য ত্রাণের বন্দোবস্ত করাসহ তিনটি বিদ্যালয়, একটি দমকল স্টেশন ও একটি হাসপাতাল তৈরি করেন। যক্ষারোগ সত্ত্বেও মাইলের পর মাইল ঘুরে কৃষকদের চিকিৎসা করেন। সেখানেই ১৮৯৪ সালে ‘দ্য সীগাল’ নাটকটি লিখতে শুরু করেন। ১৮৯৬ সালের ১৭ অক্টোবর পিটার্সবার্গের আলেক্সান্দ্রিনস্কি থিয়েটারে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। প্রথমদিকে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়লেও পরে নাটকটি সমালোচকদের মনোযোগ কাড়ে। ১৮৯৬ সালে লিখেন নাটক ‘আঙ্কল ভানিয়া’।

১৮৯৭ সালের মার্চে মস্কোতে থাকাকালীন সময়ে চেখভ ফুসফুসে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ফুসফুসের উপরের অংশে যক্ষা ধরা পড়ে। ১৮৯৮ সালে পিতার মৃত্যুর পরে চেখভ ইয়াল্টাতে শহরের বাগানবাড়ি তৈরি করে মা ও বোনের সঙ্গে চলে আসেন। ইয়াল্টাতে বিখ্যাত গল্প ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ডগ’ লিখেন।

বিবাহভীতিতে ভোগা চেখভ ১৯০১ সালের ২৫ তারিখে ওলগা নিপারকে বিয়ে করেন। তার সঙ্গে চেখভের প্রথম দেখা হয় ‘দ্য সীগাল’ নাটকের মহড়ায়। চেখভ বেশির ভাগ সময়ে ইয়াল্টাতেই থাকতেন আর অভিনয় পেশার খাতিরে ওলগা থাকতেন মস্কোতে।

১৯০৪ সালের মে মাসের মধ্যেই চেখভ প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। যক্ষায় ১৯০৪ সালে ১৫ জুলাই জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টে তার মৃত্যু হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর