মিরাজ মোহাইমেন
কবি-সাহিত্যিকদের অমর প্রেমগাথা
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের অন্যতম একজন রচয়িতা কাহ্নপা চর্যাগীতিকার দুটি লাইনে বলেছেন :
“তু লো ডোম্বি হউ কাপালী।
তোহোর অন্তরে মোত্র ঘালিলি হাড়েরি মালী॥”
-ডোম্বি একজন ডোম জাতীয় নিচু জাতের স্ত্রীলোক আর কাপালী হচ্ছে কাপালিক বা তান্ত্রিক। কাপালিক ডোম্বি মেয়েকে উদ্দেশ করে বলছে, তুমি ডোম্বি আর আমি একজন কাপালিক। তোমার অন্তর দিয়ে তুমি আমাকে ঘায়েল করেছ বলে তোমার জন্য আমি হাড়ের মালা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ কাপালিক ডোম জাতীয় নিচু জাতের কন্যার প্রেমে আকুল হয়ে ধর্ম সাধনা ছেড়ে ডোম্বি কন্যার জন্য হাড়ের মালা পরেছে, যা তার নিয়মতান্ত্রিক ধর্ম-সাধনার বাইরে।
প্রাচীন যুগের সাহিত্যের পর যদি আমরা মধ্যযুগীয় সাহিত্যের দিকে তাকাই তাহলে প্রথমেই বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের দুটি লাইনের কথা মনে পড়ে যায়। সেখানে রাধা বলছে :
“কে না বাঁশী বা এ বড়ায়ী সে না কোন জনা।
দাসী হআঁ তার পাত্র নিশিবোঁ আপনা॥”
বড়ায়ী রাধার সখী। রাধা তার সখীকে উদ্দেশ করে বলছে, কে সে বাঁশি বাজায়? সে কোন জন? দাসী হয়ে তার পায়ে নিজেকে সপে দেব।
এখানেও আমরা দেখতে পাচ্ছি- স্বামী, ঘর-সংসার, সব থাকা সত্ত্বেও কৃষ্ণের প্রতি রাধার অসামাজিক প্রেমের পরিচয়। রাধা প্রেমের তাড়নায় জাত-পাত, সমাজ-সংসার, সব কিছু তুচ্ছ জ্ঞান করে কৃষ্ণের প্রেমে ধরা দেয়। অর্থাৎ এখানেও দেবলীলা নয়, মানবলীলা তথা মানব প্রেমের দিকটিই স্পষ্ট। প্রেমহীনে কে বাঁচিতে চাই, আর তাই তো শুনি :
“নষ্ট জলে পা ধুয়েছো এখন উপায় কি?
আচ্ছাদিত বুকের বোঁটা চুমোয় কেটেছি।
কথার কোলে ইচ্ছেগুলো বাৎসায়নের রতি,
মানে এবং অন্য মানে দু’টোই জেনেছি।
নষ্ট জলে ধুইয়ে দেবে কখন আমার গা,
তোমার দিকে হাঁটবে কখন আমার দু’টো পা?
সেই দিকে মন পড়েই আছে, দিন তো হলো শেষ;
তোমার মধ্যে পবিত্রতার একটি মহাদেশ
এবং এক জলের ধারা দেখতে পেয়েছি-
একেই বুঝি মানুষ বলে, ভালোবেসেছি।”
- এ উচ্চারণ কবি সৈয়দ শামসুল হকের। আসলে ভালোবাসার মহাদেশের অতল গভীরে কী যে রহস্য, কী যে উথাল-পাতাল প্রেমহীনে বোঝা বড় দায়। কথিত সুন্দরকে ছাপিয়ে মজনুকে যখন প্রশ্ন করা হয়- লাইলীতে কী পেয়েছ তুমি, কৃষ্ণ এক নারী, সে যে কদাকার! তখন মজনুর মুখে এ উত্তর উচ্চকিত হয় আমার চোখ দিয়ে লাইলীকে না দেখলে প্রেমের মর্মকথা কী বুঝবে তুমি? এ কারণেই সুফী কবি মওলানা রুমী বলেছেন, লাইলীকে দেখতে মজনুর চোখ লাগে। আর সেই চোখ ও মমচিত্ত নিয়ে কবি সাহিত্যিকরা করেছেন প্রেম। কিছু বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের জীবনীকাররা গবেষণা করে শনাক্ত করেছেন তাদের প্রেম আর প্রেমাস্পদকে। আর এই প্রেমের পরশে তাঁরা পৃথিবীকে উপহার দিয়ে গেছেন তাঁদের সৃষ্টি করা বিখ্যাত সব কবিতা, রচনা সম্ভার। নিচে তাদের কয়েকজনের জীবনের প্রেম বিষয়ক ঘটনা সংক্ষেপে দেওয়া হলো-
দান্তে আলগিয়েরি :
মধ্যযুগের ইউরোপের ঘোরতর তমসার মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এলেন তিনি হচ্ছেন দান্তে। অবাক ব্যাপার, মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি তার সমবয়সী বালিকা বিয়াত্রিচের প্রেমে পড়েন। বিয়াত্রিচের প্রতি তার প্রবল আবেগ থেকে রচিত হয়েছে “Vita Nuova” বা “নব জীবন”। অথচ এ কথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে তিনি বিয়াত্রিচকে জীবনে মাত্র দু’বার দেখেছেন। এবং এ-ও সন্দেহজনক, বিয়াত্রিচ আদৌ তার আবেগ সম্পর্কে জেনেছিলেন কিনা। দান্তের এ প্রেম রক্ত মাংসের নয়, এ হচ্ছে ঐশ্বরিক। জীবনে তিনি বিয়াত্রিচকে পাননি। বিয়াত্রিচের বিয়ে হয় সাইমন নামে এক যুবকের সঙ্গে এবং মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে বিয়াত্রিচ মারা যান। প্রেয়সীর অকাল মৃত্যুই দান্তেকে মহৎ করে তোলে। তিনি লিখলেন : “That truly one may never think of her without a passion of exceeding love.” (ভিটা নোভা-২৭) বিয়াত্রিচকে খুঁজে বেড়ালেন জীবনের ওপারে মরণে, লিখলেন ডিভাইন কমেডি এবং স্বর্গ থেকে বিয়াত্রিচ তাকে blessed life-এর সন্ধান দিলেন।
জন কিটস :
ফ্যানি ব্রাউন নামের এক তরুণীর সঙ্গে হৃদয়ঘটিত জটিল সম্পর্ক জন কিটস্ জড়িত হয়ে পড়েন। ফ্যানি যে সত্যি কিটসকে ভালোবাসতেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু কিটস নিজেই সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে জ্বলে পুড়ে মরেছেন। দারিদ্র্য, দুরাবস্থা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য এ সব মিলে তার প্রেম একটি সুস্থ সবল গতিপথ খুঁজে পায়নি। কিটসের শক্তি ও দুর্বলতার উৎস ছিল তার প্রাণপ্রতিম ফ্যানি ব্রাউন। ফ্যানির প্রতি প্রেম থেকেই তিনি Lamia, The Nightingale, The Grecian Urn ইত্যাদি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। এই বিদগ্ধ কবি মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন। সব চাইতে মর্মবিদারক হচ্ছে কিটসকে লেখা ফ্যানির শেষ চিঠি যা কিটসের মৃত্যু শয্যায় গিয়ে পৌঁছে এবং এটা খোলার মতো শক্তিও তার ছিল না। প্রথমে চিঠিটি তিনি তার কফিনে দিতে বলেন, পরে আবার নিষেধ করেন। শেষ পর্যন্ত চিঠিটি তার মৃতদেহের সঙ্গে কফিনে দেওয়া হয়।
পার্সী বীশি শেলী :
রোম্যান্টিক ভাবধারার এ কবির জীবনে প্রেমের বিষয়টা একটু অন্যরকম। তার প্রেম নির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার জীবনে এসেছে হ্যারিয়েট, মেরী, ফ্যানি ও এলিয়েন। কিন্তু তাদের কাউকে নিয়ে তিনি কখনও পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হতে পারেননি।
মায়াকোভস্কি :
রাশিয়ান বিপ্লবের কবি মায়াকোভস্কি তার কৈশর বয়স থেকেই এলসা ত্রিয়লের প্রেমে পড়েন। এলসা ত্রিয়লে পরবর্তীকালে বিখ্যাত ফরাসী কবি হন এবং তিনি আর এক বিখ্যাত ফরাসী কবি লুই আরাঁগকে বিয়ে করেন। মায়াকোভস্কি এলসার বোনকে বিয়ে করেন কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এলসাকে ভালোবেসে গেছেন এবং বিপ্লবের শেষে পারী থেকে প্রেম বিষয়ে চিঠি লিখলেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় বোধ করতে লাগলেন। এক সময় জীবনের ‘অর্থহীনতা’র কারণে গুলি করে আত্মহত্যা করলেন। তার মৃত্যুর পর মৃতদেহর পাশ থেকে যে চিরকুটটি পাওয়া যায় সেখানে তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা ছিল ‘লিলি আমাকে একটু ভালবেসো’।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত :
কলকাতা থেকে মাদ্রাজে যাওয়ার কিছুকাল পরেই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে প্রেম, অতঃপর বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন এমিলিয়া আঁরিয়েতা(হেনরিয়েটা) সোফিয়া নামে এক ফরাসী তরুণীকে বিবাহ করেন। আঁরিয়েতা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ :
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কত বড় মাপের প্রেমিক কবি ছিলেন, তা আমাদের সবারই জানা। “ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে, আমার নামটি লিখো তোমার, মনেরও মন্দিরে” আবার “সখি ভালবাসা কারে কয়” এই সব পঙক্তি উঁচুমাপের প্রেমিক মন না থাকলে লেখা যায় না। যৌবনের সূচনায় কাদম্বরী দেবীকে, যৌবনের শেষে মৃণালিনী দেবীকে হারিয়ে তিনি হয়েছেন বিচলিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন আর্জেন্টাইন মহিলা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ১৯২৪ সালে তিনি পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করেন এবং সেই সময় আর্জেন্টিনায় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর অতিথি হন। আর এ জন্যই কি তিনি লিখেছেন- “আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী”।
নজরুল :
বিদ্রোহী কবি নজরুলের জীবনেও বিভিন্ন সময়ে প্রেম এসেছে। নার্গিস ছিল নজরুলের জীবনের প্রথম নারী। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বাসর ঘরেই তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে নার্গিসকে কবি কোনো দিন ভুলতে পারেননি। এর পর উদ্ভ্রান্ত নজরুল তরুণী প্রমিলার প্রতি আকৃষ্ট হলেন। প্রমিলার প্রতি প্রেম থেকে তিনি “বিজয়িনী” কবিতাটি রচনা করেন। দুঃখ দিয়েই যার জীবন গড়া সেই ‘দুখু মিয়া’ জীবনের বেশির ভাগ সময়ই দারিদ্র্যের মাঝে দিন কাটিয়েছেন। তবু প্রেমের মধ্যে তিনি খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন জীবনের সান্ত্বনা।
বিদ্যাপতি :
এক গরিব কবি। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তার প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলী। কথিত আছে যে পরমপুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিত্য তার রচনা গাইতে ভালোবাসতেন। অনেক বাঙালি কবি এই ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভানুসিংহের পদাবলীতে’ আমরা এই ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। বাঙালিরা চর্যাগীতির ভাষা থেকে এই ব্রজবুলীকে অনেক সহজে বুঝতে পারেন। এই কারণেই বিদ্যাপতিকে বাঙালি কবিদের অন্যতম হিসেবেই গণ্য করা হয়। তার পদাবলী ছন্দ, আলংকারিক নৈপুণ্য ও গভীর হৃদয়াবেগে সমৃদ্ধ। প্রেম ও ভক্তি তার কবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে। যিনি রাজদরবারে শুধু দূর থেকে মিথিলার রানী, লছমা দেবীকে শিকের আড়াল থেকে দেখেই তৃপ্ত হয়েছেন। আর না পাওয়ার বেদনা থেকেই তিনি লিখেছেন-
“এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।।”
চণ্ডীদাস :
ব্রাহ্মণ চণ্ডীদাস অন্তজ রাণীর মধ্যেই রাধাকে অনুভব করেছিলেন। তার রাধা তো পৌরাণিক রাধা নয়। তার রাধা হচ্ছে এক অন্য শ্রেণীর নারী, সামাজিক বিধিনিষেধের টানাপোড়েনে যাকে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তার রাণী রূপ পেয়েছে রাধার মধ্যে আর তার পদাবলীর আবেগ হয়ে উঠেছে এত নিবিড় এত অন্তরঙ্গ।
ইংরেজ কবি লর্ড বায়রণ :
শৈশবে তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি অমিতব্যয়ী ও উচ্ছ্বাসপ্রবণ স্বভাবের অধিকারী হন। তার পিতা ছিলেন জুয়াড়ি ও অমিতব্যয়ী এবং মাতা ছিলেন প্রচণ্ড খামখেয়ালি। বাল্যকালে বায়রণ বিকলাঙ্গ ছিলেন। তিনি কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। এ জন্য তিনি প্রায়ই বিষণ্ন থাকতেন। তার মাতার প্রচেষ্টায় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি অদ্ভুতভাবে আরোগ্য লাভ করেন। কিন্তু এরপর হতে তিনি আরও জেদী ও একরোখা হয়ে পড়েন।
বায়রণ মাত্র আট বছর বয়সে মেরী ডাফ নামে এক বালিকার প্রেমে পড়েন। দশ বছর বয়সে তার কাজিন মার্গারেট পার্কারের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন। আর ১৫ বছর বয়সে তাঁর জীবনে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি গভীরভাবে মেরী চাওয়ার্থের প্রেমে উন্মত্ত হন। বায়রণের পিতৃব্যের-পিতৃব্য দ্বৈতযুদ্ধে মেরী চাওয়ার্থের পিতামহকে হত্যা করেন। উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও বায়রণ তার চেয়ে দুই বছরের বড় মেরী চাওয়ার্থকে বিবাহ করতে মনস্থির করেন। কিন্তু মেরী চাওয়ার্থ এ স্কুল-বালককে বিবাহে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।
হতাশায় বায়রণ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এ অবস্থায় ক্যামব্রিজে কিছু দিন অবস্থানের পর তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করে বিদেশ ভ্রমণে বের হন। পর্তুগাল, স্পেন হয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দেশসহ গ্রিস ও তুরস্ক পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এথেন্সে অবস্থানকালে ব্রিটিশ ভাইস কনসালের কন্যা মিস থেরেসা ম্যাক্রিকে উদ্দেশ করে সুন্দর একটি ছোট কবিতা মেইড অব এথেন্স লিখেন। তারপর তিনি লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে কবি হিসেবে দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন ও প্রভূত সামাজিক মর্যাদা লাভ করেন। তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য লক্ষ্য করে স্যার ওয়াল্টার স্কট বলেন, তার মুখাবয়ব কেবল স্বপ্নে ধারণা করা সম্ভব হতো। তার উজ্জ্বল চোখ ও বাঙ্ময় মুখাকৃতি সহজে সকলকে আকর্ষণ করত।
জাঁ পল সার্ত্র ও সিমোন দ্য বুভোয়ার :
ফরাসী লেখক ও দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্র ও সিমোন দ্য বুভোয়ারের বন্ধুত্ব এবং গভীর প্রেম আজও মানব-মানবীর সম্পর্কে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে। বিংশ শতাব্দীর যদি কোনো প্রেমকাহিনী কোনোদিন বিস্তারিতভাবে লেখা হয়, যদি সেই প্রেমে জ্ঞান-বুদ্ধির অংশ অথবা ভূমিকা কতটা আছে বা থাকার কথা তাহলে জাঁ পল সার্ত্র (২১ জুন ১৯০৫−১৫ এপ্রিল ১৯৮০) এবং সিমোন দ্য বুভোয়ারের (৯ জানুয়ারি ১৯০৮−১৪ এপ্রিল ১৯৮৬) কথা অবশ্যই আসবে এবং সঙ্গত কারণেই। ১৯২০-এর দশকে দু’জনের পরিচয় ঘটে এবং এরপর যতগুলো বছর তারা বেঁচে ছিলেন, তত দিন তাদের প্রেম, তাদের গভীর সম্পর্ক বজায় ছিল। ১৯৮০-এর ১৫ এপ্রিল সার্ত্র মৃত্যুবরণ করেন। সার্ত্রের মৃত্যু বুভোয়ার সহজভাবে নিতে পারেননি। ছয় বছর পর, সে-ও প্রায় কাঁটায় কাঁটায়, বুভোয়ার মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ছিল ১৪ এপ্রিল ১৯৮৬। বুভোয়ারের দেহাবশেষ ওই কবরেই সমাহিত করা হয়, যেখানে পূর্বে থেকেই সার্ত্রের দেহাবশেষ সমাহিত ছিল। এইভাবে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ লেখক, অথবা শিল্পীই বলা যায়, মরণেও একে অন্যের হয়ে রয়ে গেলেন।
তবে ঝামেলা পাকিয়েছে সম্প্রতি তার চরিত প্রণেতারা। তাদের মৃত্যুর পর তাদের পত্রাবলী এবং অন্যান্য লেখায় যে ধরনের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। নারী-পুরুষের প্রেমে চিরকাল এক ধরনের প্রবল দাবি এবং সেই দাবির আশপাশে ঈর্ষা নামের সত্য বরাবরই কাজ করেছে। প্রেমিকা অন্যত্র চলে যাওয়ার ফলে প্রেমিক নিজেকে ধ্বংস করেছে। আবার প্রেমিকের ক্রমাগত অনীহা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে প্রেমিকার জীবনে নেমে এসেছে দুঃখ-বিষাদ−এমনকি মৃত্যুও। কিন্তু এ সবের কিছুই সার্ত্র ও বুভোয়ারের জীবনকে ছুঁতে পারেনি। তাদের প্রেমের মৌলিকতা রক্ষা করে তারা আবার অন্য ব্যক্তির প্রেমে পড়েছেন, দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং সে-ও একজন আরেকজনকে জানিয়ে। সার্ত্র তার প্রায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক রক্ষা করে গেছেন এবং বুভোয়ারও একইভাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। ওলগা নামের এক অল্পবয়সী নারীর সঙ্গে সার্ত্র বহু বছর প্রেমে আবদ্ধ ছিলেন। এর পাশাপাশি ওলগার বোন ওয়ান্ডাকেও তিনি তার প্রেমিকার মর্যাদা দিয়েছিলেন। আবার বুভোয়ার এক মার্কিন লেখক, যার নাম নেলসন অলগ্রেন, তার প্রেমে পড়েছিলেন এবং তার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরে অবশ্য এই সম্পর্কে তিক্ততা প্রবেশ করে, যখন বুভোয়ার তার একটি গল্পে অলগ্রেনের সঙ্গে তার প্রেম ও দৈহিক সম্পর্কের বিষয়টি তার কাহিনীর চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আবার একটি সময় এসেছে যখন সিমোন দ্য বুভোয়ার জ্যাক-লঘেন্ট বোস্ত নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমে পড়েছেন, যদিও তিনি ভালো করেই জানতেন যে বোস্ত তারই এক সন্দেহভাজন রমণীর সঙ্গে তখন প্রেমে আবদ্ধ ছিলেন।
এই সকল তথ্য প্রকাশ পায় সার্ত্র এবং বুভোয়ারের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক কারণেই এ সব তথ্য অনেককেই বিচলিত করেছে। কিন্তু তাদের চিঠিপত্রে যা জানা যায় তা হলো এই যে, সার্ত্র এবং বুভোয়ার নিজেরা মোটেও এই বিষয়গুলো নিয়ে বিচলিত ছিলেন না। বরং তাদের উভয়ের সম্পর্ক এবং অন্যান্য নরনারীর সঙ্গে তাদের আলাদা আলাদা সম্পর্ককে আধুনিকতা বলেই গণ্য করতেন।
পরিশেষে দিল্লীর কবি আসাদুল্লাহ গালিবের একটি গজলের উদ্ধৃতি দিয়ে এই নিবন্ধ শেষ করছি। তিনি বলছেন-
“আয়নাতে দেখে চুপ কেন? প্রেমে লাজ?
হৃদয় দেবে না বলে গর্ব ছিল; করো সাজ;
পত্রবাহকের প্রাণ নিয়ো না তোমার হাতে;
নেই তার অপরাধ,
তার তাতে যা কিছু হয়েছে আমার অপরাধ সকলি আমার।”
আসলে কবি-সাহিত্যিকরা প্রেমে পড়ে অনেক সময় অমরসব সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রচনা করে গেছেন কালজয়ী কবিতা, উপন্যাস, গল্প। তাদের মানসপ্রিয়া স্থিত বহু লেখায়। আর অমরত্ব পেয়েছে তাদের সেইসব প্রেমাস্পদ।
পাঠকের মতামত:
- সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ
- শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিলো বিএসইসি
- "বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থাকে"
- "তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং আর থাকবে না"
- নিয়োগপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির শপথ বৃহস্পতিবার
- দুদিনে সোনার দাম কমলো ভরিতে ৫২৩৮ টাকা
- তাপপ্রবাহে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ ঝুঁকিতে
- ঈদযাত্রায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬৭ জন
- সারাদেশে হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু
- প্রাইম ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
- লোকসান থেকে মুনাফায় হাইডেলবার্গ সিমেন্ট
- "শরীয়াহভিত্তিক প্রোডাক্ট আনলে অনেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে"
- খালেদা জিয়ার গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানি ২৫শে জুন
- ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ, গণগ্রেফতারের মুখে মার্কিন শিক্ষার্থীরা
- আমি এখানে কাজ শুরু করতে মুখিয়ে আছি: মুশতাক
- দুই সেঞ্চুরির ম্যাচে হারের খলনায়ক মুস্তাফিজ
- নির্যাতিত বাংলাদেশীদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত: অমিত শাহ
- এমভি আবদুল্লাহর কয়লা খালাস শুরু, ২৩ নাবিকই ফিরবেন জাহাজে
- বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীর আদালত অবমাননার আদেশ পেছালো
- আগামী দিনে হজ্ব ব্যবস্থাপনা আরও স্মার্ট হবে: ধর্মমন্ত্রী
- ১১ বছরেও শেষ হয়নি রানা প্লাজা ধসের বিচার
- ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুত, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ
- ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডে গেলেন প্রধানমন্ত্রী
- সাংবাদিক আতিকুর রহমান হাবিব এর মৃত্যুতে বিএনপি মিডিয়া সেলের শোকবার্তা
- গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
- সূচকের পতনে লেনদেন শেষ
- হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
- পদ্মা নদীতে তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
- দায় এড়াতে পারেন না কারিগরি সাবেক চেয়ারম্যান: ডিবি হারুন
- কমেছে স্বর্ণের দাম
- ভোরের কাগজ পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আতিক আর নেই
- ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ওপর যে কারনে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
- পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ
- রাজধানীতে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
- বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে আগ্রহী কাতার
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড
- বৃষ্টির সম্ভাবনা তবে অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহও
- "দেশের বাইরেও সরকারকে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে দেখছি"
- ঢাকা থেকে প্রধান ১৫ টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়লো
- কাতারের সঙ্গে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
- পুঁজিবাজারের সংকট নিরসনে বিএসইসির তিন সিদ্ধান্ত
- সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ
- বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট
- বাসাবাড়িতে এডিসের লার্ভা পেলেই জেল,জরিমানা: মেয়র
- কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি
- "আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে"
- পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
- ট্রেন ভাড়ার ছাড় প্রত্যাহার, বাড়ছে ভাড়া
- প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা
- নাভানা ফার্মার পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা
- মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা
- না ফেরার দেশে অভিনেতা রুমি
- মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থী মুইজ্জার বড় জয়
- রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রিয়ালের কাছে হারল বার্সা
- কসবা সীমান্তে ওপারে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত
- আজ থেকে ইতালির ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট
- ঋণ খেলাপি চিহ্নিতে উপজেলা প্রার্থীদের তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
- সহকারী শিক্ষক নিয়োগে সংশোধিত ফল প্রকাশ
- খালেদা জিয়ার ১১ মামলার শুনানি ২৯ জুলাই
- আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি: প্রধানমন্ত্রী
- দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত, তিনদিনের হিট আ্যালার্ট
- পতনের ধারা থেকে সরানো যাচ্ছে না পুঁজিবাজারকে
- মাধবদীতে হিট স্ট্রোকে এক যুবকের মৃত্যু
- ১৯ দিনে রেমিট্যান্স ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি
- তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
- উপজেলা নির্বাচনও সংসদ নির্বাচনের মতো হবে: ইসি আলমগীর
- ফের সোনার দাম বাড়ালো বাজুস
- তীব্র তাপপ্রবাহে সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিফ হিট অফিসারের
- বিএনপির প্রতি জনগণের কোনো আগ্রহ নেই: কাদের
- একের পর এক দেশ বিরোধী কাজ করছে সরকার: রিজভী
- দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধানমন্ত্রী
- মিনিস্টারের শত কোটি টাকার ঈদ উপহার জিতে আনন্দিত ক্রেতারা
- তাপদাহ: দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
- "ইসরাইল নয়, ফিলিস্তিনিরাই করবে গাজা শাসন"
- এক কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা ছাত্রলীগের
- এক কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা ছাত্রলীগের
- অস্বাভাবিক আর্থিক প্রতিবেদনের ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কিউআইও আবেদন শুরু রোববার
- আসাম থেকে বাংলাদেশে আসছে মাসডো এর একটি বিশেষজ্ঞ টিম
- ইরান-ইসরায়েল: সামরিক শক্তিতে এগিয়ে কারা?
- গুজব উড়িয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন হাথুরুসিংহ
- ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- ইরান- ইসরাইল উত্তেজনা: স্থায়ী সংঘাতের সতর্কতা তুরস্কের
- তিলকে তাল বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে: বেনজীর
- প্রাথমিকে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ
- আবারও এক হচ্ছেন তাহসান- মিথিলা
- ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার কারন জানালো বিএসসিপিএলসি
- থার্ড টার্মিনালে বাউন্ডারি ভেঙে রাইদা বাস, নিহত ইঞ্জিনিয়ার
- এবার ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল হিজবুল্লাহ, আহত ১৩
- পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন
- ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, বন্দরে সতর্কতা
- বাংলাদেশে চীনা ভিসা সেন্টার চালু
- ম্যানচেস্টার সিটির হৃদয় ভেঙ্গে সেমিতে রিয়াল
- ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
- ইসরাইলের অস্ত্র ইরানি বাচ্চাদের খেলনা: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- হজযাত্রীদের স্বস্তি দিতে কাজ করছে সরকার: ধর্মমন্ত্রী
- বাংলাদেশে যত অপরাধ হয়, তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী
- সারাদেশে তিন দিনের হিট এলার্ট জারি
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
- এই অবৈধ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে: রিজভী
- ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল